দক্ষিণ এশিয়া

মোদী যাবেন বলে রাতারাতি বদলে গেলো হাসপাতালের চেহারা

নয়াদিল্লি, ০১ নভেম্বর – গুজরাটে ঝুলন্ত সেতু ছিঁড়ে প্রায় দেড়শ জনের মৃত্যুর পর শোকে কাতর গোটা ভারত। আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন আরও বহু মানুষ। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) তাদের দেখতে যাবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ উপলক্ষে হঠাৎ হাসপাতালটিকে ঝাড়পোছ করে নতুন রঙে সাজাতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছিল সোমবার রাতে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুসারে, গুজরাটের মরবি জেলায় মাচ্ছু নদীর ওপর তারের তৈরি প্রাচীন একটি ঝুলন্ত সেতু ছিঁড়ে যে ১৩৫ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৭টি শিশু রয়েছে। অবশ্য বিবিসির খবরে নিহতের সংখ্যা ১৪১ জন বলে জানানো হয়েছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনায় আহত শতাধিক মানুষ মরবি সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার তাদের এবং দুর্ঘটনাস্থল দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর। আর সে কারণেই হাসপাতালটিকে চকচকে করতে রাতভর তৎপরতা চালায় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার রাতে মরবি হাসপাতালে গিয়েছিল এনডিটিভির একটি টিম। তারা দেখেছে, মধ্যরাতে সেখানে ব্যাপক সংস্কারের কাজ চলছে। হাসপাতালের বেশ কিছু দেওয়াল ও ছাদে নতুন রঙ লাগানো হয়েছে। দুটি ওয়ার্ডে রোগীদের বিছানার চাদর বদলে ফেলা হয়েছে ঝড়ের গতিতে। শেষ রাতে হাসপাতালের আঙিনা ঝাড়ু দিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। এমন সংস্কারযজ্ঞের ফলে রাতারাতি হাসপাতালটির চেহারা বদলে গেছে ।

উঁচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিদর্শন সামনে রেখে বিভিন্ন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে সংস্কার কাজ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার একটি ট্যাজেডির মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর নিন্দায় সরব হয়েছে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির (এএপি) মতো দলগুলো।

বিরোধী দল কংগ্রেস সোমবার রাতে টুইটারে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে হিন্দি ভাষায় লিখেছে, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী মোদী মরবির সিভিল হাসপাতালে যাবেন। তার আগে রঙের কাজ চলছে, চকচকে টাইলস বসানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের লজ্জা নেই। এত মানুষ মারা গেছে, আর তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ব্যস্ত।

গুজরাটে ক্রমেই প্রভাবশালী হতে থাকা এএপি ছবিসহ টুইট করেছে, মরবি সিভিল হাসপাতালের দৃশ্য। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর ফটোশুটে যাতে কোনো ত্রুটি না হয় সেজন্য মেরামতের কাজ চলছে। বিজেপি যদি গত ২৭ বছর কাজ করতো, তাহলে মধ্যরাতে হাসপাতাল সংস্কারের দরকার হতো না।

এর আগে, গত রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিতে হঠাৎ ভেঙে পড়ে ১৪০ বছরের পুরোনো সেতুটি। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিপুল খরচে সংস্কারের পর মাত্র পাঁচদিন আগে খুলে দেওয়া হয়েছিল সেটি।

রাজকোট রেঞ্জের মহাপরিদর্শক অশোক যাদবের উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, এ ঘটনায় সংস্কার ও রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অশোক বলেছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়েরের পর আমরা নয়জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের মধ্যে ওরেভা গ্রুপের ব্যবস্থাপক এবং টিকিট ক্লার্কও রয়েছেন।

কিছুদিন আগেই সেতুটি সংস্কারে দুই কোটি রুপি খরচ করেছে বলে দাবি করেছিল ওরেভা গ্রুপ। কিন্তু সেতু রক্ষণাবেক্ষণে তাদের দায়িত্ব দেওয়া নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।

একসময় নিজেদের ‘বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি প্রস্তুতকারক’ বলে দাবি করতো কোম্পানিটি। পরে তারা আলোকসজ্জা পণ্য, ব্যাটারিচালিত বাইক, গৃহস্থালীয় পণ্য ও টিভি উৎপাদন শুরু করে। এমন একটি কোম্পানিকে কেন ঐতিহাসিক সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এখন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

অশোক যাদব জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত চলছে।

সূত্র: জাগো নিউজ
এম ইউ/০১ নভেম্বর ২০২২

Back to top button