বেড়েছে চালের দাম, শাকসবজিতেও অস্বস্তি
ঢাকা, ২৮ অক্টোবর – ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোপা আমনসহ কৃষকের অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত, শীতকালীন সবজির মাঠ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সিত্রাংয়ের তাণ্ডব।
সপ্তাহ না ঘুরতেই এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য অনেক পণ্যের মতো শীতকালীন সবজির দামও চড়া। ডিম-চিনিতেও মেলেনি স্বস্তি। কমেনি মাছ-মাংস ও চালের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে সব ধরনের পণ্যের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম।
এছাড়া আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, চিনি এবং সবজির বাজার ঊর্ধ্বগামী। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মাঝারি ধরনের চালের (পাইজাম ও লতা) দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকার মতো। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে প্রতি কেজি মাঝারি ধরনের চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে চাল তারা বিক্রি করেছেন ৫৬ টাকা কেজি দরে, এই সপ্তাহে সেই একই চাল বিক্রি করছেন ৫৮ টাকা কেজি দরে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা, আটাশ ৫৫ থেকে ৫৮, নাজিরশাইল ৮৩ থেকে ৯১, মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫৫, চিকন চাল ৭০ থেকে ৮০, কাটারি ৬০ থেকে ৬৫, আটাশ ৪৮ থেকে ৫৫ এবং পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে।
নতুন করে বেড়েছে আটার দামও। প্যাকেট আটা গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছেন ৫৮ টাকা কেজি দরে। এই সপ্তাহে সেই একই আটা বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজিতে। এছাড়া গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আটা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে তিন টাকার মতো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ময়দা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজি দরে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এই ময়দার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে বড় দানা মসুর ডালের (তুরস্ক ও কানাডা) দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মাঝারি ধরনের মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে দেশি মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে তা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তারা আরও বলছেন, দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে এক টাকার মতো।
গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে সেই একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজি। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আমদানি করা রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ও আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকার বেশি। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে চিনির দাম। চলতি সপ্তাহ থেকে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসীয়ারা। তবে এর কোনও প্রভাব নেই। এখনও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজারে পৌঁছায়নি সরকার-নির্ধারিত দামের চিনি।
যদিও গত সোমবার ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) থেকে সরকার-নির্ধারিত দাম, অর্থাৎ প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি করা হবে। বাজারে চিনির সংকট থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা। এরপর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা কেজি দরের চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। কোথাও কোথাও ১২০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে চিনি।
এমনকি নতুন নতুন শীতকালীন সবজি বাজারে এলেও দামও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। এ কারণে দামও এখন চড়া। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে চিচিঙ্গা, বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও কাকরোলসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অবশ্য প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এটি বাজারের মধ্যে সবচেয়ে কম দামি সবজি। বিশেষ করে করলা গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি থাকলেও চলতি সপ্তাহে ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৮০, গোল বেগুন ৫০ থেকে ৬০, ঢ্যাঁড়স ৬০, শিম ১০০ থেকে ১২০, টমেটো ও গাজর ১৪০, বরবটি ৯০ থেকে ১০০, ফুলকপি প্রতি জোড়া ১৩০, বাঁধাকপি ৬০, লাউ ৪০ থেকে ৭০, শসা ৬০, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, মানভেদে কাঁচা মরিচ ১০০, মুলা ৬০ ও চিচিঙ্গা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২১০ আর দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০, পাকিস্তানি কক ৩২০, দেশি মুরগি ৫৩০ থেকে ৫৫০ ও দেশি হাঁস ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা, কাঁচকি ৭০০, পাবদা ৬০০, রূপচাঁদা ১ হাজার ১০০ এবং তেলাপিয়া ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৮ অক্টোবর ২০২২