সাহিত্য সংবাদ

এক চোখ ও হাত হারালেন সালমান রুশদি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ছুরি হামলায় আহত বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি একটি চোখ একটি হাত হারিয়েছেন। আকস্মিকভাবে হওয়া সেই হামলা এতোটাই গুরুতর ছিল যে, রুশদিকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছিল। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে বেঁচে ফিরলেও মারাত্মক সেই ছুরি হামলায় এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন রুশদি। সঙ্গে তার একটি হাতও পঙ্গু হয়ে গেছে। অ্যান্ড্রু ওয়াইলি নামে রুশদির এক এজেন্টের বরাতে সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশদির এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশদির ওপর হওয়া হামলাকে ‘নৃশংস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার (সালমান রুশদি) আঘাতের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। রুশদির পাশাপাশি সল বেলো এবং রবার্তো বোলানোর মতো বড় সাহিত্যিকের প্রতিনিধিত্বও করেন ওয়াইলি।

সাক্ষাৎকারে লেখক সালমান রুশদির ক্ষতকে অত্যন্ত ‘গভীর’ বলে উল্লেখ করে ওয়াইলি একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর কথা সামনে এনে বলেন, ‘হামলায় সালমান রুশদির ঘাড়ে তিনটি গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হয়। বাহুর নার্ভ কেটে যাওয়ায় একটি হাত অক্ষম বা পঙ্গু হয়ে গেছে। এছাড়া, তার বুকসহ অন্যান্য স্থানে আরও প্রায় ১৫টি ক্ষত রয়েছে’।

বুকার পুরস্কারজয়ী এই লেখক এখনও হাসপাতালে আছেন কিনা জানতে চাইলে অ্যান্ড্রু ওয়াইলি বলেন, ‘আমি তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারব না। তিনি বেঁচে থাকবেন… এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’।

গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরি হামলার শিকার হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি। ঘটনার দিন সকালে নিউইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক লোক দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।

মূলত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসের জন্য বহু বছর ধরেই সালমান রুশদি কট্টর ইসলামপন্থিদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান চলাকালেই তার ওপর হামলা হয়। হামলার পর পুলিশ হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বাসিন্দা।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। সেসময় রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।

স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাইসকে ওয়াইলি বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে সালমান রুশদির সঙ্গে এই জাতীয় হুমকি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এত বছর ধরে তিনি যে বড় বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন তা হলো- কোনো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে ফতোয়া জারি করা এবং হঠাৎ আক্রমণের শিকার হওয়া।

তার ভাষায়, ‘আপনি এর বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারবেন না, কারণ এই ধরনের হামলা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং অযৌক্তিক। এটি জন লেননের হত্যাকাণ্ডের মতো ছিল’।

উল্লেখ্য, আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ হয়, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বই প্রকাশের পর প্রায় ১০ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে। পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর সামনে না এগোলেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দেয়।

এম ইউ/২৪ অক্টোবর ২০২২

Back to top button