চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কিছুতেই কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ

চট্টগ্রাম, ২০ অক্টোবর – চট্টগ্রামে কিছুতেই কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও। তথ্যানুযায়ী, এ বছর দেশের ৫০ জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকার পর এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রাম নগরে গতকাল নতুন করে ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৪২ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৭৬৮ জন। এছাড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞের অভিমত, ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে— ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। ২০১৮ সালের পর ডেঙ্গুর ডেন-১ ধরনে মানুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি। ২০২১ সালে সব মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩ ধরনে। কিন্তু এই বছর ডেন-৪ ধরনের প্রকোপ তুলনামূলক অনেক বেশি। আবার ডেন-৩ ও ডেন-১ ধরনেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

অর্থাৎ ডেঙ্গুর তিনটি ধরন দেশে এখন সক্রিয়। তবে চট্টগ্রামে ডেন-৩ ও ডেন-৪ ধরনটি বেশি সক্রিয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নং মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ও ডেঙ্গুর ফোকাল পারসন এসএম আসাদুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর ১০টা ওয়ার্নিং সাইন থাকে। এ সাইনগুলো প্রকাশ পেলেই আমরা ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে নেই। ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে ডেন-৩ ধরনটাই চলছে। ডেন-৪ ও দেখা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রোগীদের খারাপ লক্ষণ হলো, রোগীর রক্তক্ষরণ হয়। এখন আমরা ডেন-৩ ধরনের রোগীই বেশি পাচ্ছি। কারণ এ ধরনের মধ্যে পড়া ডেঙ্গু রোগীদের খারাপ লক্ষণের মধ্যে প্রথমেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’

এদিকে চট্টগ্রামের অবাধ্য এ মশাদের কাছে চসিক এখন অনেকটাই নিরুপায়। মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী গাণিতিকহারেই বাড়ছে চট্টগ্রামে। চসিকের ওষুধে মশা মরুক আর নাই মরুক তবুও মশা মারতে আর ডেঙ্গু ঠেকাতে লোকবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। আগামী ২০ অক্টোবর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় মশক নিধনে লোকবল বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে মশক নিধনে বর্তমানে ১৮৩ জন লোক কাজ করছেন। এরসঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে আরও ৪০ জন। নগরের যেসব এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট সেসব এলাকায় মশক নিধন কাজে তাদের যুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা।

এর আগে গত বছর মশক নিধন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে চার জোনে ভাগ করে মশা মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু মশা মারতে চসিকের একের পর এক সিদ্ধান্তই যেন জলে যাচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রচলিত বিষাক্ত কীটনাশকগুলো ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ওই কীটনাশকগুলো ছাড়াও নতুন ভেষজ ওষুধটি পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করে ৩৩টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা, ৩৯টি স্থানে এনোফিলিস মশার লার্ভা এবং ২২টি স্থানে উভয় প্রকার লার্ভার খোঁজ পায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলটি সংগৃহীত লার্ভাগুলো লালন-পালন করে পূর্ণাঙ্গ বয়ষ্ক মশায় রূপান্তর করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গবেষকদলের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রচলিত বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে এবং ফগিং (ধোঁয়া হিসেবে ছড়ানো) সামান্য কার্যকর এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে তৈরি ‘মসকুবান’ ওষুধটি শতভাগ কার্যকর। সিনিয়র অধ্যাপকদের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিটি মেয়রের কাছে হস্তান্তর করেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবুল হাসেম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। স্প্রে ও ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু কাজ না হওয়ায় আগের চেয়ে লোকবল বাড়ানো হয়েছে। এখন আমরা নতুন আর একটি ওষুধ মসকুবান স্প্রে করার চিন্তা করছি মশা নিধনের জন্য।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২০ অক্টোবর ২০২২

Back to top button