‘জাতীয় খাদ্য কাউন্সিল’ গঠনের দাবি রবের
ঢাকা, ১৯ অক্টোবর – সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকটের বিষয়ে জনমনে মারাত্মক ভীতি ও আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। একই সঙ্গে তিনি নয়দফা দাবি জানান।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আ স ম আবদুর রব বলেন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ অবনতিশীল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে খাদ্য, সার ও জ্বালানি সংকট বিশ্বে বিপর্যয়কর রূপ নিতে পারে। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ জীবিকার সংকটে বিপর্যস্ত। ৬৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য কেনার জন্য ঋণ নিয়েছেন, ৪২ শতাংশ পরিবারের জীবনযাত্রা ও খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এছাড়া ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন মানুষের দুর্দশা বেড়ে চলছে। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ধরনের চাপ সামলাতে পারছে না। সংকট মোকাবিলায় তাদের সামর্থ্য কমে এসেছে।
জেএসডি সভাপতি বলেন, জ্বালানি সংকট, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি, ডলারের অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির সংকটে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সরকার সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ না নিয়ে বারবার এই ভয়াবহতার কথা বলে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে উন্নয়নের ফাঁকা বুলি আড়াল করতে চাচ্ছে। আসন্ন দুর্ভিক্ষকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে সরকার যেন কোনো গোপন অভিলাষ চরিতার্থ করতে না পারে, সে বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, খাদ্য সংকট চরম বিপর্যয়ের নিকটবর্তী হওয়ার আগেই ১৭ কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রশ্নটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদ, ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক সহ পেশাজীবী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দ্রুত ‘জাতীয় খাদ্য কাউন্সিল’ গঠন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে তিনি নয়দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-
১. অবিলম্বে জাতীয় ‘খাদ্য সহায়তা’ তহবিল গঠন করতে হবে।
২. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কৃষিজমি সুরক্ষা ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের আওতায় আনতে হবে।
৩. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বিতরণে সমন্বিত আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সার, ডিজেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সামাজিক সুরক্ষার আওতাকে আরও সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে হবে।
৫. পুষ্টিহীন শিশুদের সুষম খাবারের সংস্থান করতে হবে।
৬. জীবিকাবিহীন, বেকার কর্মক্ষম মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
৮. মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বহুমুখী উদ্যোগ ও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এবং
৯. ‘একমুখী উন্নয়ন দর্শন’ পরিহার করে মানব উন্নয়ন কেন্দ্রিক ‘গণমুখী ও অংশীদারত্বমূলক উন্নয়ন দর্শন’ প্রবর্তন করতে হবে।
সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১৯ অক্টোবর ২০২২