জাতীয়

সরকারের বকেয়া ২২ কোটি টাকা: কিডনি ডায়ালাইসিস বন্ধের আলটিমেটাম

চট্টগ্রাম, ১৬ অক্টোবর – সরকার বকেয়া ২২ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের আলটিমেটাম দিয়েছে বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। অর্থাভাবে আগামী ১৭ বা ১৮ অক্টোবরের মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছি প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) চমেক হাসপাতাল পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

স্যান্ডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সিন্ধীর সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, ২২ কোটির অধিক বকেয়া নিয়ে সেবাদান অব্যাহত রাখতে কোম্পানির সক্ষমতা নেই। অর্থাভাবে গত মাসে স্টাফদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিল পরিশোধ করতে না পারায় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চলতি মজুতে ১৭ বা ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সেবা দেওয়া সম্ভব। এরপর যে কোনো মুহূর্তে সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকায়ও সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে স্যান্ডরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান বলেন, আমরা কোনোভাবেই সেবা বন্ধ রাখতে চাই না। আমরা চাই রোগীরা যেন কোনোভাবে কষ্ট না পান। কিন্তু সংকট অনেক দিন ধরে চলছে। পাঁচ বছর ধরে আমাদের আংশিক বিল পরিশোধ করলেও একটি অংশ বকেয়া রেখে দেওয়া হয়েছে। এখন ২২ কোটি টাকার বেশি বকেয়া পাওনা। এই বিপুল অঙ্কের বকেয়া না পাওয়ায় আমাদের হিমশিম অবস্থা।

‘আমরা যে প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করি, তাদের বিল পরিশোধ করতে পারছি না। টাকা না দেওয়ায় কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করতে সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা দেনায় পড়েছি। ওইসব সাপ্লাইয়াররা আমাদের আর প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাঁচামাল সরবরাহ করছে না। ওষুধ ও কাঁচামাল না পেলে ডায়ালাইসিস সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। যে কারণে ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’

তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে আমাদের অপারগতার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এরপরও আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। আমরা চাই এর একটি সমাধান হোক।

জানা যায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিসে দুটি সেন্টার স্থাপন করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস। শুরুর পর থেকে বর্তমানে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৫৯টি ও চমেক হাসপাতালে ৩১টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চমেক হাসপাতালের পুরোনো (মূল) ভবনের নিচ তলায় (ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের পাশে) এই ডায়ালাইসিস সেন্টারটি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের ওই সেন্টারে ২০১৭ সালে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম চালু হয়।

এদিকে, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বর্তমানে সবমিলিয়ে ২২ কোটি টাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বকেয়া পড়ে।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, স্যান্ডরের পক্ষ থেকে বকেয়া টাকা পরিশোধের বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। ওই চিঠিটি সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পরিশোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিল দাখিল করলে সেটি সই করে ফরোয়ার্ড করে দেওয়ার কাজটুকু আমরা করে থাকি।

চমেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, স্যান্ডরের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সর্বশেষ যে বিল দাখিল করেছে, আমরা সেটিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে স্যান্ডর জানিয়েছে, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে তাদের বিল আটকে থাকছে। বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় এখন তাদের পক্ষে সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। চিঠিতে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো তেমন বিকল্প নেই। হাসপাতালে মাত্র ছয়টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে। তাই স্যান্ডরের সেবা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়বেন। আমরা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এর আগেও চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকেও দুটি সেন্টারে একযোগে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আগের দিন (৪ জানুয়ারি) রাতেই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি।

স্যান্ডর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দিন বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিল। ওই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু প্রায় এক মাসেও সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় ২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর। ওই সময় হঠাৎ ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করায় দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুর্ভোগে পড়েন।

আগাম ঘোষণা ছাড়া সেবা বন্ধ রাখায় সেন্টারের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন তারা। ওই দিন প্রায় ৮ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে পুনরায় সীমিত আকারে ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা হয়।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১৬ অক্টোবর ২০২২

Back to top button