এশিয়া

ডিভোর্সের পর নারীদের বিয়ের বিধিনিষেধের ইতি টানছে জাপান

টোকিও, ১৫ অক্টোবর – নারীদের ডিভোর্সের পর পুনরায় বিয়ে করার ব্যাপারে জাপান ১৯ শতকের একটি আইন পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। এই আইন বিবাহবিচ্ছেদের পরে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারণ করে। অনিবন্ধিত রয়ে যাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া শিশুদের সংখ্যা হ্রাস করতেই এই উদ্যোগ।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দেশটির মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন পেয়েছে। যার অধীনে জন্মের সময় ওই নারীর পতিকে পিতৃত্ব প্রদান করা হবে।

বর্তমান অধিবেশনে সংসদে পেশ করা সংশোধিত আইনটি গর্ভবতী নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের ১০০ দিনের মধ্যে পুনর্বিবাহ করার ওপর নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাবে। যা স্পষ্টতই পিতৃত্ব নিয়ে বিরোধ এড়াতে আরোপ করা হয়েছিল।

১৮৯৮ সালের সিভিল কোডের অধীনে যা এখনও বলবৎ আছে, বিবাহবিচ্ছেদের ৩০০ দিনের মধ্যে একজন নারীর কোলে জন্ম নেওয়া সন্তানকে তার সাবেক স্বামীর সন্তান বলে গণ্য করা হয়। এমনকি যদিও সে পুনরায় বিয়ে করে থাকে। অনেক নারী নিয়ম মেনে চলার পরিবর্তে তাদের সন্তানদের নিবন্ধন না করার পথ বেছে নেন, বিশেষ করে পারিবারিক নির্যাতনের বিষয় থাকলে।

পারিবারিক পদ্ধতির অধীনে নাগরিকদের নিবন্ধন করার অনুশীলন দম্পতিদের আলাদা নাম রাখার অধিকার অর্জনের পাশাপাশি সমকামী বিবাহ প্রবর্তনের জন্য প্রচারকারীদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিপরীতে, দক্ষিণ কোরিয়া ব্যক্তিগত নিবন্ধনের পক্ষে ২০০৮ সালে তার পারিবারিক নিবন্ধন ব্যবস্থা পরিত্যাগ করে।

নারী-পুরুষ সমতায়নের ক্ষেত্রে জাপান অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। গত জুলাই মাসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২২-এ মোট ১৪৬টি দেশের মধ্যে জাপান ১১৬ তম স্থানে রয়েছে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) মতে, ৩২টি দেশের মধ্যে একটি জাপান, যা বিবাহবিচ্ছেদের পরে নারীদের জন্য পুনর্বিবাহের ওপর বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ বজায় রাখে।

এই ইতিহাসিক রায়ের জন্য কাজ করেছেন আইনজীবী তোমোশি সাক্কার। তার প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নারীদের জন্য পুনর্বিবাহের নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস থেকে ১০০ দিনে কমিয়ে আনা হয়। তিনি বলেন, আইনী সংশোধনীটি শিশুদের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

তোমোশি সাক্কার বলেন, যেই শিশুরা পারিবারিক নিবন্ধনের বাইরে থাকতো সেই সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে এই আইনী সংশোধনী। তারা অবশেষে বুঝতে পারছেন যে এটি শিশুদের জন্যই।

আগস্টে জরিপ করা প্রায় ৮০০ অনিবন্ধিত শিশু থাকার পেছনে দেশটির বিচার মন্ত্রনালয় ৭১ শতাংশ পিতৃত্ব আইনকে কারণ হিসাবে উদ্ধৃত করেছে। যেসব শিশু অনিবন্ধিত থাকে তারা সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষায় প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হয়, তারা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হয় এবং সাধারণত পাসপোর্টও ইস্যু করতে পারে না।

রেজিস্ট্রেশন ও পিতৃত্বের নিয়ম জাপানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বিবাহবর্হিভূত জন্ম বিরল। বিষয়টি ব্যাপকভাবে ভ্রুকুটির চোখে দেখা হয়। প্রায় ২ শতাংশ শিশু অবিবাহিত জুটির কোলে জন্মগ্রহণ করে, যেখানে ওইসিডি দেশগুলোর গড়ে ৪১ শতাংশ।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১৫ অক্টোবর ২০২২

Back to top button