ঝিনাইদহ

নষ্ট রাজনীতির বলি তিন ছাত্রলীগ নেতা!

ঝিনাইদহ, ১৪ অক্টোবর – তারা তিন শিক্ষার্থী- সাইদুর রহমান মুরাদ, তৌহিদুল ইসলাম ও সমরেশ চন্দ্র বিশ্বাস। পড়তেন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে। নষ্ট রাজনীতিকবলিত হয়ে অকালে নিভে গেছে তাদের জীবনদীপ। সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে তিনটি পরিবারের লালিত স্বপ্ন।

মুরাদের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামে। তারা তিন ভাই। বাবা বদিউজ্জামান বাদশা। তিন সন্তানের মধ্যে দুটি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। বদিউজ্জামান বাদশা পাশের মাগুরা জেলা শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর টিউশনিটাও করতে পারেন না। বড় ছেলে সাদেক হোসেন পড়ে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়ে আজ প্রায় পঙ্গু। সাদেক অতিকষ্টে বিএ পাস করে সরকারি কে সি কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। আর দশজনের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। তাই সংসারের চাকা ঘোরাতে বাড়িতে বসে দু-একটি টিউশনি করেন। জন্ম থেকে এক পায়ে সমস্যা ছোট ছেলে মোক্তারের। পাঁচ বছর আগে সেই পা-ও ভেঙে যায়। তার পর থেকে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। এর পরও কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। আশার আলো ছিলেন সাইদুর রহমান মুরাদ। এই ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল বাদশা মোল্লার। লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি করে বৃদ্ধ বাবা-মার পাশে দাঁড়াবেন। ভাইদের সহযোগিতা করবেন। কিন্তু ৭ অক্টোবর রাতে তৌহিদ আর সমরেশের মতো তিনিও প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। নিথর দেহটা ময়নাতদন্ত শেষে যখন বাড়ির আঙিনায় পৌঁছায় তখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা বদিউজ্জামান বাদশা। তৌহিদুল ইসলাম ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামে। পিতৃহারা তৌহিদুল ডিগ্রি অর্জন করে জীবন সাজাতে চেয়েছিলেন। তারা দুই ভাইবোন। বড়বোন মমতাজের বিয়ে হয়ে গেছে পাঁচ বছর আগে। তখন বাবা বেঁচে ছিলেন তাদের। হঠাৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা গোলাম মোস্তফা দুই বছর আগে মারা যান। মা জাহানারা একমাত্র পুত্রসন্তানকে আগলে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু সে আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। তৌহিদুলের বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্র হারানো মা জাহানারা নির্বাক। তৌহিদুলের চাচা গোলাম সরোয়ার জানান, ছেলেরা সুসন্তান হতে গিয়ে নষ্ট রাজনীতির বলি হয়েছে।

সমরেশ বিশ্বাসের বাবা রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস কৃষক। যশোরের পালদিয়া গ্রামে বাড়ি। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সমরেশ। বড়বোন মীনাক্ষির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটবোন অনিমা এইচএসসি পাস করেছেন। ছোট ভাই তনুশ্রী বিশ্বাস অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে সমরেশ যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। বুকভরা আশা ছিল তার। সরকারি চাকরি নিয়ে হাল ধরবেন সংসারের। কিন্তু তা আর হলো না। শুক্রবার মুরাদ ও তৌহিদের সঙ্গেই সমরেশ চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। সমরেশের চাচাতো ভাই চ-ীদাশ বলেন, নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ছাত্রদের নোংরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন তিনি।

সূত্র: বিডিপ্রতিদিন
এম ইউ/১৪ অক্টোবর ২০২২

Back to top button