প্রতিদিন ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন ভারতে
নয়াদিল্লি, ১৪ অক্টোবর – ভারতে ২০২১ সালের প্রত্যেক দিন গড়ে অন্তত ১৫ জন করে কৃষক এবং ১৫ জন করে কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। গোটা দেশে যে আত্মহত্যার মোট পরিসংখ্যান, তার সাত শতাংশই কৃষক। ২০১৭ সাল থেকে এ যাবৎ এই পরিসংখ্যানই সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছেছে। সিএনএন-নিউজ এইটিনের সাম্প্রতিক সমীক্ষার পরে এমনই ভয়াবহ তথ্য সামনে এল।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্যও বলছে, ২০২১ সালে দেশে যত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং আত্মহত্যার কথা সামনে এসেছে, তার ৬.৬ শতাংশই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ।
ওই রিপোর্ট বলছে, কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, এমন মোট ১০ হাজার ৮৮১ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন ২০২১ সালে। এদের মধ্যে ৫৩১৮ জন কৃষক এবং ৫৫৬৩ জন কৃষিশ্রমিক। এদের মধ্যে ২১১ জন নারীও আছেন। দেশে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ, ৬৪ হাজার, ৩৩ জন।
গবেষণা বলছে, এই যে ৫৩১৮ জন কৃষক ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ৪৮০৬ জনের নিজস্ব জমি ছিল। ৫১২ জন চাষ করতেন লিজ নেওয়া জমিতে বা অন্য কারও জমিতে। ফলে নিজের জমি থাকা কৃষকেরাই যে বেশি বিপদে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে এই সংখ্যাাটা দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ হাজারে। কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত এতগুলো মানুষ আত্মহত্যা করেছেন এই চার বছরে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।
গতবছরের এই বড় সংখ্যার আত্মহত্যার বেশিরভাগাই ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। চার হাজারেরও বেশি কৃষি-আত্মহত্যা হয়েছে সেখানে, যার মধ্যে ২৬৪০ জন ছিলেন কৃষক, যারা নিজের জমিতে চাষ করতেন। মহারাষ্ট্রের পরেই আসে কর্নাকের নাম, যেখান থেকে ২১৬৯টি আত্মহত্যার পরিসংখ্যান মিলেছে। এর পরেই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু। গোটা দেশের মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষি আত্মহত্যাই এই ক’টি রাজ্য থেকে হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের চিত্র এই বছরও শোচনীয়। দু’দিন আগেই জানা যায়, তিনদিনে অন্তত ৯জন কৃষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে। সূত্রের খবর, গত মাসে অতিবৃষ্টির জেরে শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর তার জেরেই অবসাদে, হতাশায় ডুবে যান কৃষকরা। সেই ২০০০ সাল থেকে বিদর্ভ জন আন্দোলন সমিতি কৃষকদের আত্মহত্যা বিষয়টি সামনে আনছে বারবার।
তাদের দাবি, ১২ জন কৃষক এই মাসেও আত্মহত্যা করেছেন। চলতি বছরে জানুয়ারি মাস থেকে ধরলে, এই সংখ্যা পৌঁছেছে ৫১২তে।
জুলাই মাস থেকে অতিবৃষ্টির জেরে ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর পরেও কৃষকরা ক্ষতিপূরণের জন্য অতিরিক্ত শস্যবীজ পাননি বলে অভিযোগ। এদিকে ব্যাংক ও পাওনাদাররা তাদের ছাড়েনি।
অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, চণ্ডীগড় এই সমস্ত কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে কিন্তু আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্য, বলছে এনসিআরবি-র তথ্য।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/১৪ অক্টোবর ২০২২