সচেতনতা

দিনে কয়টি ডিম খাবেন?

নওরিন আক্তার

একটি ডিম থেকে মেলে ৭৫ ক্যালোরি, ৭ গ্রাম শক্তিশালী প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফ্যাটসহ আয়রন, ভিটামিন ও মিনারেল। ক্ষতিকর জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে পারে এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে ডিমে। এছাড়া আমাদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য নিয়মিত ডিম খাওয়ার বিকল্প নেই।

দিনে কয়টি ডিম খাবেন?

ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। তবে অতিরিক্ত কোনও খাবার খাওয়াই যেমন ভালো নয়, তেমনি ডিমও মাত্রাতিরিক্ত খাওয়াটা অনুচিত। গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ারের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ জানালেন, যারা প্রতিদিন শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাদের কখনোই দিনে দুটির বেশি ডিম খাওয়া উচিত নয়। খুব বেশি গরমের দিনে একটির বেশি ডিম খাবেন না। ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে; সকালের নাস্তায় ডিম খেলে দুপুরের আগ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। ঠিক একইভাবে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ক্যালোরি গ্রহণ করার মাত্রাও কমে যায়। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩০ নারীর ওপর এই গবেষণা করা হয়েছিল।

টিনএজারদের পুষ্টি ও খাবারের চাহিদা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে চাইলে বাড়তি ডিম খাওয়া যেতে পারে। তবে রোজ কয়টি করে ডিম খাবেন তা নির্ভর করে টিনএজারদের ওজন কতো ও শারীরিক জটিলতা আছে নাকি তার ওপর। যদি ওজন অনেক কম হয় তাহলে দিনে ২ থেকে ৩টি ডিম তারা দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে পারে।

ডিমের কুসুম কী শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, আগে মনে করা হতো ডিমের কুসুম খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় তা পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হয়। ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই, বি ১২ এবং কে। পাশাপাশি থাকে নানা ধরনের মিনারেল, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ডিমে ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। কিন্তু এ কথা শুনে অবাক হবেন যে এই খাবারের কোলেস্টেরলের সবটা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল না। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মূলত আসে চিনি থেকে। মিষ্টি কোনও খাবার এক্ষেত্রে না খাওয়াই ভালো। ডিমের কুসুমে উপস্থিত ফ্যাট উল্টো সেই কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডিম খান কুসুমসহ।

ডিম কীভাবে খাবেন?

দেহের প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে ডিমের তুলনা নেই। এছাড়াও ডিমে রয়েছে শর্করা, স্নেহ এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। পেশি ও হাড়ের জোর বাড়াতে সাহায্য করে ডিম। তবে কীভাবে ডিম খাচ্ছেন এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেলহীন অর্থাৎ সেদ্ধ ডিম সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। কাজ করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। ডিম খেলে সেই শক্তি পাওয়া যায়। মূলত ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই এই শক্তি মেলে। এর ভিটামিন বি খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, এটি চোখের জন্য বেশ ভালো। ডিম খেলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। এছাড়া ডিমে থাকা ক্যারোটিনয়েড আর ল্যুটেন বয়স হয়ে গেলে চোখের এক বড় সমস্যা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

ডিমের অসহিষ্ণুতা কী?

ডিমের অসহিষ্ণুতা বা এগ ইনটলারেন্স হলো ডিম খাওয়ার পর প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া। ডিমের সাদা অংশ, ডিমের কুসুম বা উভয়ের প্রতিই কারোর কারোর অসহিষ্ণুতা থাকতে পারে। এই ধরনের অসহিষ্ণুতা সাধারণত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করে, যেমন পেট ফোলা বা ডায়রিয়া। কিছু ক্ষেত্রে, অসহিষ্ণুতা বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে। নাহিদা আহমেদ জানালেন, এটি যেকোনও বয়সেই হতে পারে। ডিমের অ্যালার্জি থেকে আলাদা বিষয়টি, যেটি ডিমের প্রোটিনের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ঘটে। ডিমে অ্যালার্জি থাকলে খাওয়ার ঠিক পরেই চুলকানি, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। শরীর ফুলে যাওয়া, বিশেষ করে মুখ এবং গলার চারপাশে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এগ ইনটলারেন্স বা ডিমে অ্যালার্জি থাকলে অবশ্যই এটি এড়িয়ে চলতে হবে।

আইএ

Back to top button