জাতীয়

আলোচনা সমালোচনায় ইসি

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর – গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করার পর দেশজুড়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। বুধবার নানারকম অনিয়মের কারণে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি।

সাধারণত নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ পেলে স্থানীয় রিটানিং অফিসার নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু এবার হয়েছে পুরোপুরি উল্টো ঘটনা। সিসি ক্যামেরায় ভোটের অনিয়ম দেখে সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। অথচ স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসার ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে দাবি করেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোট স্থগিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সরকারবিরোধীরা এ ঘটনাকে সরকারের একটি কূট কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন কমিশনকে বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন ছিল সরকারের কাছে ট্রাম্পকার্ড। এখানে সরকার সফল হয়েছে।

নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বিরোধীরা মোটামুটি খুশি, যদিও তারা সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবার একটি জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। সে কারণে নিজেরাই নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য হলো। এর মধ্যদিয়ে আমাদের কথার সত্যতা প্রমাণিত হলো যে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যদিয়ে আরও এটি বার্তা এলো যে, নির্বাচন কমিশনের চেয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে গোপন বুথের ছবি দেখে কেন্দ্র বন্ধ করা কতটুকু যৌক্তিক ও আইনসম্মত নির্বাচন কমিশনকে তা ভেবে দেখতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উপ-নির্বাচন বন্ধ করা কোনো হঠকারী ছিলো না। নির্বাচন কমিশন চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বাতিলের ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি দুই উপজেলায়। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা কার্যালয় ঘেরাও করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।

উপ-নির্বাচনে ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবির পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও চেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভোটগ্রহণ চলার মাঝখানে উপ-নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার একদিন পর বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকা সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজ। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা টায়ার জ্বালিয়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে সড়কের দুই পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে ভোটে অনিয়ম তদন্তে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপরই গাইবান্ধা ভোটের পরবর্তী নির্দেশনা দেবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার রাজধানী আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৪ অক্টোবর ২০২২

Back to top button