অপরাধ

কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হাজীগঞ্জের রিগান

চট্টগ্রাম, ১২ অক্টোবর – চট্টগ্রামে গাড়ি ব্যবসার নামে অভিনব কৌশলে বিভিন্ন জনের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে এক ব্যবসায়ী। নগরীর অভিজাত খুলশি এলাকায় আলিশান ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দিনের পর দিন প্রতারণা করছিল সে। প্রতারকের নাম ইসমাঈল হোসেন রিগান। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের অলিপুর এলাকায়। বাবার নাম মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারী।

রিগানের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশি থানায় এরই মাধ্যে ৫ টি মামলা ও চারটি জিডি হয়েছে। পাঁচ মামলায় ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পাওনার অভিযোগ আনা হয়েছে। রিগান লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর খুলশি থানায় অর্ধশত লোক ভিড় করেন। সবাই নানাভাবে রিগানের কাছে ব্যবসার নামে টাকা লগ্নি বা গাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির দামি গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর কথা বলে তা বিক্রি করে দিয়ে টাকা ক্যাশ করে পালিয়েছে সে।

খুলশি থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘রিগান নামে এক ব্যক্তির কাছে পাওনা দাবি করে ৩০-৪০ জন লোক কিছু দিন আগে থানায় এসেছিলেন। ইতোমধ্যে তার (রিগান) বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ও চারটি জিডি হয়েছে। রিগান নানা কৌশলে গাড়ি ও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে শোনা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি পালিয়ে গেছে। এরপরও আমারা মামলাগুলো তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। ভুক্তভোগী আরও কেউ মামলা করলে আমরা তা নেব।’

জানা যায়, রিগান চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া দেশের ৫০ হাসার শিক্ষার্থী নিয়ে তৈরি ফেসবুক গ্রুপ এসএসসি ২০০২ ও এইচএসসি ২০০৪-এর এডমিন প্যানেলের সদস্য। প্যানেলের সদস্য হিসাবে সে গ্রুপে থাকা সহজ-সরল বন্ধুদের অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কথা বলে ১৫-২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেক সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের কেউ মামলা করলেও অনেকে মামলা করছেন না।

সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম এসে রেন্ট-এ-কার ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা শুরু করেন রিগান। সে মাসিক ভিত্তিতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ভাড়ায় গাড়ি নেয়। সেই গাড়ি বিভিন্ন কোম্পানিকে সরবরাহ করে। এর থেকে লাভের একটি অংশ নিজে আরেকটি অংশ গাড়ির মালিককে প্রদান করে। ৫০ হাজার টাকা যে গাড়ির মাসিক ভাড়া সে গাড়ি ৭০-৭৫ হাজার টাকায় ভাড়ায় নিয়ে গাড়ি মালিককে লোভে ফেলে। এভাবে মাস কয়েক বিশ্বাস জমানোর পর অনেকে মার্সিডিজ বেঞ্জ থেকে শুরু করে হায়েচ, জিপ, নোয়া ভক্সি, নোয়া মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি তার হাতে তুলে দেয়। বিশ্বাস জমানোর এক পর্যায়ে প্রতারক রিগ্যান গাড়িগুলো বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করে নেয়। ভুয়া সেল রিসিট, ভুয়া স্ট্যাম্প, ভুয়া এনআইডি কার্ড বানিয়ে কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ি বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দেয়। ৫০ লাখ টাকা দামের গাড়ি ৩০ লাখ টাকায়, ২৭ লাখ টাকা দামের গাড়ি ২০ লাখ টাকায় এভাবে রেন্ট-এ-কারের নামে নেওয়া প্রায় দেড়শ’ গাড়ি বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়ক ও জনপথ অধদপ্তর ছাড়াও কর্ণফুলী টানেল, ইপিজেড, সরকারি বড় বড় প্রকল্পে গাড়ি সরবরাহ করত সে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসায় বিনিয়োগের নামেও রিগান বিভিন্ন জনের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, রিগান দক্ষিণ খুলশীর তিন নম্বর সড়কে সানম্যার রয়েল রিজ নামের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে ডি-৪ ফ্ল্যাটে বসবাস করত। বাড়ির পাশে ৪ নম্বর সড়কে ৫৭০ নম্বর বাড়িতে অফিস স্থাপন করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। গ্লোবাল করপোরেশন নামের কোম্পানি গঠন করে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। আর ব্যবসার নামে নানা চুক্তি ও প্রতারণা করে অনেককে পথের ফকির বানিয়েছে সে।

অভিযোগ আছে, রিজ অ্যাপার্টমেন্টেরই এক ফ্ল্যাট মালিকের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি ৬৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে রিগান। এছাড়া নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহানের কাছ থেকে একটি গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি এক্সিয়ো প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে তিনটিই বিক্রি করে দেয় সে। অন্যদিকে কামরুল নামের এক ব্যক্তির কাছে একটি হায়েচ মাইক্রোবাস ২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে রিগান। নগদ টাকা তুলে দেওয়ার পর গাড়ি ডেলিভারি নিতে এসে কামরুল দেখেন রিগান লাপাত্তা।

সূত্র: যুগান্তর
আইএ/ ১২ অক্টোবর ২০২২

Back to top button