চট্টগ্রাম, ১২ অক্টোবর – আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম শহরের আশপাশে পাহাড় কাটার ঘটনা নতুন নয়। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, এমনকি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) নিয়মিত মামলা ও জরিমানা করে থাকে। ইতোমধ্যে অবশিষ্ট পাহাড়গুলো রক্ষায় প্রচলিত আইনকে আরও কঠোর করা হয়েছে। তবে এবার পাহাড় কাটাকে কেন্দ্র করে সিডিএর উল্টো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিডিএ। এখন বাকি কেবল আনুষ্ঠানিকতা। আবেদনটির অনুমোদন দিতে মরিয়া সিডিএ কর্মকর্তারা।
নগরীর এসএস সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের আশকার দীঘির পাড়ের কাছে গ্রিনল্যাজ পাহাড়ের সামনের পাহাড়টি অনেকখানি কাটা হয়েছে। সেখানে ২২ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি চান ভবনটির মালিক। এবিসি টাওয়ার আর মিশন গ্রুপের ভবনের মাঝখানে ১৫ কাঠা ওই পাহাড়ি ভূমিটি করোনাকালে দিনে-রাতে কাটা হয়। বিষয়টি জানার পর পরিবেশ অধিদপ্তর সেখানে অভিযান চালায়। ২০২০ সালের ১ জুন পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই অভিযানে ভূমির মালিক সনজিত দত্তকে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সড়ক বা আশপাশের এলাকা থেকে যাতে ওই পাহাড়ি জমিটি দেখা না যায় সেজন্য সড়কের পাশে উঁচু করে টিনের ঘেরা দেওয়া হয়।
সিডিএর এক কর্মকর্তা জানান, ওই জায়গায় বড়জোর ৯ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি মিলতে পারে। ২২ তলার জন্য আবেদন করা বাড়াবাড়ি। তিনি জানান, সিডিএর ইমারত নির্মাণ বিধি অনুযায়ী ওই পাহাড়ি ভূমিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেবল ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’ চাইলেই এই অনুমোদন দিতে পারে। গত রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়টির কাটা অংশে এরই মধ্যে ঘাস ওঠে সবুজ হয়ে গেছে। তবে এখনো কিছু জায়গায় পাহাড় কাটার চিহ্ন স্পষ্ট। সেখানে ত্রিপল দিয়ে ওপর থেকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আশপাশ থেকে প্রথম দেখাতেই মনে হতে পারে এটি একটি গরুর খামার। বাস্তবে আশপাশের উঁচু ভবন থেকে যাতে পাহাড় কাটার ছবি ধারণ করা না যায়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
সিডিএ সূত্র জানায়, পাহাড় কাটা ওই জায়গায় ২২ তলা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে সিডিএতে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র (এলইউসি) চেয়ে প্রথমে আবেদন করা হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানার বিষয়টি সামনে আসায় সেই আবেদন বাতিল হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। অনুমোদন না পাওয়া নিশ্চিত জেনে সিডিএর নগর উন্নয়ন কমিটিতে বিশেষ প্রকল্প হিসেবে পরবর্তীতে আবেদন করা হয়। নগর উন্নয়ন কমিটি সিডিএর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান। এই কমিটি চাইলে যে কোনো বিশেষ প্রকল্পই অনুমোদন করতে পারে। আবেদনটি বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
সিডিএর উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী বলেন, পাহাড় শ্রেণির ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমতি স্বাভাবিকভাবে হবে না। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সেটা উল্লেখ আছে। তাই এটি বিশেষ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিডিএর বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই প্রকল্পটির অনুমোদন পাইয়ে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা এই বিষয়টি স্বীকার করেন না।
তবে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে যা কিছু হবে তা আইন মেনেই হবে। আইনের বাইরে কোনোভাবেই প্রকল্প অনুমোদনের সুযোগ নেই। সিডিএর কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড় কেটে আবাসন নির্মাণের বিশেষ প্রকল্পটি অনুমোদনের চেষ্টা চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে ধরনের কোনো সুযোগ থাকবে না।
জানা যায়, পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, সেখানে এসএস সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কটি মাত্র ২৫ ফুট প্রশস্ত। সিডিএ এই সড়কটি ৬০ ফুট প্রশস্ত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফলে দুই পাশে ৩০ ফুটের বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে সিডিএকে। প্রস্তাবিত ১৫ কাঠার প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও সিডিএর সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা ছাড়তে হবে। সরেজমিন দেখা যায়, আশপাশের বেশিরভাগ বহুতল ভবনই সিডিএর নিয়ম না মেনে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে সড়কটি ৬০ ফুট প্রশস্ত করতে হলে ভবনগুলোর সামনের অংশ ভাঙা পড়বে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আশপাশের ভবনগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে সিডিএর দেওয়া শর্ত মানা হয়নি। ফলে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ওইসব ভবনের বর্ধিতাংশ ভাঙা হবে। এজন্য তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না।
সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ১২ অক্টোবর ২০২২