চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার
ঢাকা, ১০ অক্টোবর – রাজধানীর মিরপুরে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. জাকির হোসেন (৫৪) ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার (১০ অক্টোবর) ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিস থেকে ভর্তি ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল ও বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশ বই উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা লাখে এক হাজার দুইশ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা করে মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি করিয়েছে হাজারো গ্রাহককে। শুধু তাই নয়, ফ্ল্যাট, ডায়াগনস্টিক, স্কুল, হোটেল ব্যবসায় লগ্নি করার প্রলোভন দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে কিছুদিন লভ্যাংশ দিয়ে বিশ্বাসও অর্জন করে তারা। এরপর শুরু হয় তালবাহানা। এভাবে চার হাজার গ্রাহকের শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় সমবায় সমিতিতে জড়িতরা।
র্যাব জানায়, রোববার রাজধানীর মিরপুরে মানববন্ধন করে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা। পাশাপাশি এ বিষয়ে ৫৬০ জন ভুক্তভোগী র্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় লাপাত্তা চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ৩৭ বছর আগে এই সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্পআয়ের মানুষকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করত। তারা চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যানারে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করে। তারা টার্গেট করে মিরপুর এলাকার মধ্যবিত্ত, গার্মেন্টসকর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষকে উচ্চ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাসে সঞ্চয়ী পলিসি, এফডিআর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে, গত তিন-চার মাস আগে হঠাৎ অফিসে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। গ্রাহকের বিনিয়োগ করা অর্থে তারা বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান করেছেন বলে র্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে।
চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতির বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও পাঁচটি নামসর্বস্ব কোম্পানি পরিচালনা করছিলেন তারা। সেগুলো হলো— চেতনা টাওয়ার, চেতনা কুঠির, চেতনা মডেল একাডেমি, চেতনা ডায়াগনস্টিক ও হোটেল ব্লু বারশি।
সমিতির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানের নামে বর্তমানে মিরপুরের ৬০ ফিটে চেতনা টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট, বর্তমান অফিস চেতনা কুঠিরে তিনটি ফ্লোর, রূপনগরে একটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর-১০ এ একটি একটি দোকান, চেতনা মডেল একাডেমি এবং চেতনা ডায়াগনস্টিক রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা।
ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তার অডিট অনুযায়ী, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সমিতির ফান্ডে মাত্র ৫৪ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং বিপরীতে রয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি ঋণ। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/১০ অক্টোবর ২০২২