জাতীয়

পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নিরুদ্দেশ ব্যক্তিরা, ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করলো র‌্যাব

ঢাকা, ১০ অক্টোবর – বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলোর সহায়তায় পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা। এখন পর্যন্ত নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের বেশি তরুণের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এর মধ্যে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন তিনি।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের বেশি তরুণের তথ্য পেয়েছি, যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তারা দুই বছর আগ থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া শুরু করেন। সর্বশেষ দেড়মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হন।’
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘নিরুদ্দেশ তরুণদের নাম-ঠিকানা আমরা পেয়েছি। তাদের মধ্যে ৩৮ জন স্বেচ্ছায় হিজরতে রয়েছেন। তাদের বিস্তারিত তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোন জেলায় কতজন নিরুদ্দেশ সেই তালিকাও আমরা পেয়েছি। নিরুদ্দেশ তরুণদের কারো কারো পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছে মাঝেমাঝে অর্থ পাঠায়। আসলে সে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে। এই জঙ্গী সংগঠনে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।’

এর আগে কুমিল্লা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া এক ইমাম, তিন শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনকে রবিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) এর সদস্য।

গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে এক ইমামসহ সাতজন নিখোঁজ হন। গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ৪ জন তরুণকে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ৩ জন ও নিরুদ্দেশ ৪ তরুণসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

৮ অক্টোবর র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২), প নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), পিতা- হারুনুর রশিদ, রাকিব হাসনাত নিলয় (২৮) ও মোঃ সাইফুল ইসলাম রণি জায়দ চৌধুরীকে (১৯) গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতার হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষংছড়িতে তিনি প্রায় ২ বছর ধরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছিলেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এছাড়া, তিনি অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে পাঠান বলে জানান।

গ্রেফতার নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানান।

গ্রেফতার হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। দীর্ঘ ১ বছর যাবত তিনি সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।

গ্রেফতার রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। তিনি গ্রেফতার হোসাইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হন। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি প্রায় দুই মাস আগে নিরুদ্দেশ হন বলে জানান।

গ্রেফতার সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হন। তিনি নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হন বলে জানান।

সূত্র: বিডি-প্রতিদিন
এম ইউ/১০ অক্টোবর ২০২২

Back to top button