‘দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন’
ঢাকা, ০৮ অক্টোবর – বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা সক্রিয়করণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী জানান, মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগ বেড়েছে। যার ফলে আগের তুলনায় অধিক পরিমাণে ময়লা-আবর্জনা উৎপন্ন হচ্ছে। আর এসব বর্জ্য শুধু শহরে নয় বরং গ্রামগঞ্জেও উৎপন্ন হচ্ছে। আগের তুলনায় অধিক মাত্রায় বর্জ্য উৎপন্ন হওয়ায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, দেশে উৎপন্ন সকল ধরনের বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনে কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশে বর্জ্য সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর জন্য বিভিন্ন মডেল আছে। উন্নত দেশের মডেল অনুসরণ করে আমাদের দেশেও অনুরূপভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথা রেখে আমাদের দেশের জন্য কার্যকর সেই মডেল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদাভাবে পলিথিন বা অন্য কোনো ব্যাগ দেয়া হয় যার জন্য গৃহস্থালি বর্জ্য বেশি উৎপন্ন হচ্ছে। পলিথিন চাইলেই একদিনে বন্ধ করা যাবে না। আবার পাটের ব্যাগ মানুষের হাতে ধরিয়ে দেয়া যাবে না। প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাকেও হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করা যাবে না। তাহলে বিকল্প কি! এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্জ্য ডিসপোসাল করার জন্য একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার ফলে সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এসব অর্জনের কথা বললে আবার অনেকের খারাপ লাগে।
তিনি বলেন, দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে পথ নকশা তৈরি করা হয়েছে। আর এই পথ নকশা পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিতভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকাকে বাসযোগ্য এবং দৃষ্টিনন্দন করার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ড্যাপে। খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, বিনোদন কেন্দ্র, গ্রিনাইজেশন ও ওয়াটার বডি এবং পর্যাপ্ত রাস্তা না রেখে শুধু উঁচু উঁচু বিল্ডিং করা কি সমীচিন হবে- প্রশ্ন রেখে তিনি জানান, ঢাকায় শুধু মানুষের বাসস্থান নয় বরং এর সাথে সকল নাগরিক সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। যা এই ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
তিনি বলেন, ঢাকায় সব মানুষকে সকল সুবিধা দিয়ে রাখা যাবে না। এজন্য নগরের সব সুযোগ-সুবিধা সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ দর্শন বাস্তবায়ন করছেন। ইতোমধ্যে অনেক সেবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যার ফলে সারাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে গেলে ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমবে।
দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সবাই মিলে কাজ করলে যেকোনো সমস্যা সমাধানে করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, জ্বালাওপোড়াও করা এবং জনজীবন বিপর্যস্ত করা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না।
যেকোনো চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে সবাইকে বর্তমান সরকারের পাশে থাকার আহ্বান জানান তাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এছাড়া, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাভেদ আখতার, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস অ্যান্ড ম্যানুফেকসার্স এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০৮ অক্টোবর ২০২২