ঝিনাইদহ

ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করায় ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মাহফুজুর রহমান

ঝিনাইদহ, ২০ নভেম্বর- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত ম্যানেজার শৈলেন বিশ্বাস ও ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালামসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, অফিসার ক্যাশ আব্দুস সালাম ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলী জাল কাগজপত্র তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ শত শত মানুষের নামে কৃষিঋণ তুলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় উল্লিখিত তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ নিয়ে পত্রিকায় তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশিত হলে তারা ঝিনাইদহের সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল ও যুগান্তরের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি সোহাগের নামে আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ঋণের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সূত্র জানায়, জাল কাগজপত্র তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ শত শত মানুষের নামে শৈলেন বিশ্বাস, আব্দুস সালাম ও আজির আলী কৃষিঋণের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জগন্নাথ বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই শাখা ম্যানেজার পদে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম-অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠায় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ শাখায় অফিসার (ক্যাশ) পদে যোগ দেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আব্দুস সালাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজী, অপহরণ ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা থাকার পরও কীভাবে তিনি ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় চাকরি পেলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

রাজশাহীতে আব্দুস সালাম ‘বাইট্টা সালাম’ নামে পরিচিত। চাকরি পাওয়ার পর তাকে ঋণ শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। শৈলেন ও সালামকে সঙ্গে করে আজির আলী নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। স্থানীয় চক্রের সহযোগিতায় তারা জালিয়াত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। কৃষকসহ কাল্পনিক গ্রহীতাদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে এবং ভুয়া স্বাক্ষর করে তারা কৃষিঋণ নেন।

জানা গেছে, কৃষকদের ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে এক লাখ টাকার নিচে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আসছিল ব্যাংকটি। আনুমানিক এক হাজার ১০০ জনের নামে পৌনে চার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ব্যাংকটির আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রতি বছর তদারকি করা হয়েছে। একাধিক এজিএম ও ডিজিএমও শাখা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কারও চোখে জালিয়াতির বিষয়টি এতদিন ধরা পড়েনি।

শৈলেন বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হলে শাখায় নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন এসপিও নাজমুস সাদাত। তিনি যোগদানের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে টাকা জালিয়াতির খবর।

২০২০ সালের ২২ জুন যোগ দিয়ে নাজমুস সাদাত খাতা-কলমে ঋণ বিতরণের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাননি। একই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ শাখাটি পরিদর্শন করেন। কয়েকজন ঋণগ্রহীতার কাছে তিনি ফোন করলে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। একইদিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে লাখ লাখ টাকার হিসাবের গরমিল বেরিয়ে আসে।

ঝিনাইদহ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ বলেন, এলাকার ১১শ’ কৃষকের মাঝে পৌনে ৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা অডিট শেষে জানা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, জড়িতরা গোপনে ২৭ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরতও দিয়েছেন।

এদিকে, গত বুধবার ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় শেখ দীন মহম্মদ ঘটনাটি জানান।

একই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পার্থ প্রতিম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল

আর/০৮:১৪/২০ নভেম্বর

Back to top button