জাতীয়

আজ আবরারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

ঢাকা, ০৭ অক্টোবর – বুয়েটের শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি দেশে-বিদেশে চরম আলোচিত হয়।

এ ঘটনার পরদিন রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত।

আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আজ ৭ই অক্টোবর ২০২২। ভাইয়াকে মেরে ফেলার ৩ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৯ সালের ৬ই অক্টোবর সকাল ১০টার বাসে ভাইয়া কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় যায়। বিকাল ৫টার দিকে পৌঁছানোর পরে ভাইয়া একটু ঘুমাতে যায়। রাত ৮টায় ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে যায় তারই কিছু বন্ধু। রাত ১০টা পর্যন্ত নানা প্রশ্ন করার পরেই শুরু করে পালা করে পেটানো। এরপরে রাত ২-৩টার দিকে মারা যায়।

৩ বছর অনেক লম্বা একটা সময়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রায়ও হয়েছে। আসামিরা আপিলও করেছে। তবে গত ১০ মাসে আর কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয়নি। কিন্তু আমাদের আশা অন্য সব বিচারের মতো ভাইয়ার হত্যার বিচারের জন্য যেন অত বেশি অপেক্ষা করতে না হয়।

অক্টোবর আসলেই পেছনের সময়ের কথা মনে হয়। গত বছর এই অক্টোবরেই দাদিও মারা যান। প্রায় প্রতিটা কথাতেই আম্মু ভাইয়ার কথা মনে করেন। এখনো প্রায়ই কাঁদতে থাকেন। গত ৩ বছরে যত জনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, প্রত্যেকের কাছেই ভাইয়ার জন্য দোয়া চেয়েছেন আম্মু। আব্বু-আম্মু দুইজনই বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে। রাতে মাঝে মাঝেই আম্মু বলে ওঠে যে, ‘এই সময়ে আমার ছেলেকে কত মারছিলো, ও কতই চিৎকার করেছে। আশপাশের কুকুরগুলো পর্যন্ত ছোটাছুটি করছিলো তাও ওই পশুদের মনে দয়া হয়নি।

কিছুদিন পরেই হয়তো আমাদের ক্লাস শুরু হবে।সত্যি বলতে আমি নিজেও জানিনা তখন কী পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। যেই স্বপ্নের সৃষ্টি ভাইয়ার হাত ধরে, সেখানে ভাইয়াই নেই এখন। মাঝে মাঝে মনে হয় ভাইয়াকে যদি গত কয়েক বছর কী কী ঘটেছে জানাতে পারতাম, তাহলে ওর অনুভূতিটা কেমন হতো! আমাদের কাছে ভাইয়ার যে শূন্যতা সেটা যেন ক্রমেই বাড়ছে।

তবে এত কিছুর মধ্যে ভালোলাগার জায়গা একটাই, ৩ বছর হয়ে গেলেও ভাইয়াকে অনেকেই এখনো ভুলেনি। হয়তো আরো বহুদিন মনে রাখবে আর দোয়া করবে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০৭ অক্টোবর ২০২২

Back to top button