যশোর

এক বছরেও চালু হয়নি ২৪ কোটি টাকার ফুল বিপণন কেন্দ্র

তৌহিদ জামান

যশোর, ২৯ সেপ্টেম্বর – একটি শর্তের কারণে নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু করা যায়নি বাংলাদেশ-আমেরিকা সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র। ফুলের রাজধানী যশোরের পানিসারা গদখালীতে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও আধুনিক ফুল বাজার সৃষ্টিতে কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে।

ফুল চাষি, জমিদাতা এবং ফুল ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয় ফুল চাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে জমিদাতাদের একটি শর্তের কারণে এক বছরেও চালু হয়নি এটি।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘জমির দলিলের একটি অংশে বলা হয়েছে, জমির লিজ মানি দিতে হবে এবং জমির বাজারমূল্য অনুযায়ী দাম পরিশোধ করতে হবে। সেই দাম যদি ২০ বছরে পরিশোধ করা না হয়, তাহলে জমির স্থাপনাসহ মালিকানা জমির মালিকদের অনুকূলে চলে যাবে। এমন একটি শর্ত দিয়ে জমির মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে; যা একপর্যায়ে জানতে পেরেছি আমরা। এই শর্তটি সংশোধন করা না হলে কেন্দ্রের মালিকানার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গদখালী-পানিসারা এলাকার ফুল চাষি, ফুল ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল—ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ ও আধুনিক ফুল বাজার তৈরি করার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পানিসারা এলাকায় ২০১৮ সালের ৬ মে এক একর জমিতে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।

কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফুল সংগ্রহ-উত্তর ব্যবস্থাপনা, ফুল ও বীজের গুণগতমান উন্নয়ন, ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ অর্থাৎ সেগুলো সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং করা। এর মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করা। মূলত ফুল ও চাষিদের উন্নয়নে কেন্দ্রটি ভূমিকা রাখবে—সে কারণেই স্থানীয় ৯ জন কৃষক শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্র নির্মাণে এক একর জমি দেন।

স্থানীয় ফুল চাষি শাহ আলম বলেন, ‘মৌসুমে (আশ্বিন-বৈশাখ) আমি ১০ বিঘা জমিতে দশ রঙের গ্লাডিওলাস চাষ করি। সেগুলোর বীজ সংরক্ষণ করি যশোরের বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে। কিন্তু সেসব স্টোরেজে আলু যে তাপমাত্রায় রাখা হয়, একই তাপমাত্রায় গ্লাডিওলাস বীজ রাখায় এবার আমার প্রায় চার লাখ টাকার বীজ নষ্ট হয়েছে। গতবারও ক্ষতি হয়েছিল। কেন্দ্রটি চালু হলে বীজ রাখলে ক্ষতির পরিমাণ কমবে, খরচও কমবে।’

পানিসারা এলাকার ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী মীর বাবরজান বলেন, ‘ফুল বীজের সংকট রয়েছে। বাইরে থেকে আনতে হয়। কেন্দ্রটি নির্মাণের ফলে বাইরের কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা ফুলের বীজ রাখতে চান না। কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ায় চাষিরা যে সুফল পাওয়ার আশা করেছিলেন, চালু না হওয়ায় তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেন্দ্রটি চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা যে জটিলতার কথা বলছেন, সেটি দ্রুত চাষিদের স্বার্থে সমাধান করা হোক—এটাই প্রত্যাশা।’

জমিদাতা আবুল হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রটি নির্মাণে ৯ জন এক একর জমি দেন। এরমধ্যে আমাদের পরিবার থেকে দেওয়া হয় ৪০ শতক। এখানে গ্লাডিওলাস ফুলের আবাদ ভালো হয়। এই ফুলের বীজ সংরক্ষণ, চাষ বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন ফুল যাতে উৎপাদন হয় সে কারণে জমি দিয়েছিলাম। জমি দেওয়ার শর্ত ছিল—এখান থেকে আমরা লিজের টাকা পাবো। কিন্তু চালু না হওয়ায় আমরা সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি ও জমিদাতাদের অন্যতম আব্দুর রহিম বলেন, ‌‘ফুল চাষের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য চাষিরা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার শরণাপন্ন হন। যশোর এলজিইডির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির মাধ্যমে জমি গ্রহণ ও সরকারের কাছে সেই জমি প্রদানের পর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। জমি দেওয়ার সময় একটি শর্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের পর সেটি ফ্লাওয়ার সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করা হবে। সোসাইটি এখানের আয় থেকে জমির মালিকদের টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু নির্মাণের প্রায় এক বছর পার হলেও এটি চালু হয়নি।

কেন্দ্রটি কবে চালু হবে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‌‘জমিদাতারা এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট শর্ত দিয়েছেন। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হলো—জমিদাতা যিনি ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম, তিনিই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, এই জমির মালিকানা ও স্থাপনা তাদের হাতে চলে যাবে। এই শর্তটি সংশোধনের জন্য তাকে অনুরোধ করেছি আমরা। এটি সংশোধন করে দিলে আমরা তাদের সঙ্গে বসে কেন্দ্রটি চালুর বিষয়টি সম্পন্ন করবো।’

তিনি বলেন, ‘ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি, তারা যেন জমিদাতা ও ফ্লাওয়ার সোসাইটির নেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করেন। যেহেতু চাষিদের স্বার্থে এটি নির্মাণ করা হয়েছে সেহেতু এটি দ্রুত চালু করার জন্য বলা হয়েছে তাদের।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button