ফুটবল

ওরা এখন সবখানেই ‘দ্য আনবিটেন গার্লস’

সুমন মেহেদী

ঢাকা,২০ সেপ্টেম্বর – পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ২৩ গোল। বিপরীতে বল বাংলাদেশের গোললাইন পেরিয়েছে মাত্র একবার। গ্রুপ পর্বে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতও পাত্তা পায়নি লাল-সবুজের এই প্রতিনিধিদের কাছে।

সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানিদের দাপট দেখে মনে হতে পারে সাফ শিরোপা তারা ডাল-ভাত বানিয়ে জিতেছে। যেন ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ পেছনে ফিরে তাকালে শিরোপা জয় পর্যন্ত দীর্ঘ পথ!

সহজে সাবিনা-কৃষ্ণা-সানজিদাদের দলটা তৈরি হয়নি। একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে ওদের উপরে উঠতে হয়েছে। সিড়ি মাড়াতে গিয়ে অনেক সতীর্থের পা হড়কে পড়ে যাওয়া দেখতে হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ে আসা এবং শিরোপা ছোঁয়া পর্যন্ত আছে ছোট-বড় অনেক জয়-প্রাপ্তির গল্প।
যে পথে লেখা আছে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কলসিন্দুর থেকে যেন লেখা নারী ফুটবলের নতুন গল্পের শুরু। যে গল্প পূর্ণতা পেয়েছে কাঠমান্ডুর দশরথে।

ওই স্কুল থেকে আসা ১২-১৩ বছরের শিশু আঁখি খাতুন, কৃষ্ণা রানি, সানজিদা, মারিয়া মান্ডারা ২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে। গ্রাম্য পরিবেশ আর পরিবার ছেড়ে ইট-পাথরের কঠিন শহর ওদের জন্য সহজ ছিল না। যা গল্পের আরেকটি অধ্যায়।

এরপর ওদের ২০১৭ সালে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। পরে পিঠে সাঁটা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের চ্যাম্পিয়ন তকমা। ওরা জিততে জানে, ওরা লড়তে জানে। সানজিদার ভাষ্যে যে লড়াইয়ে আছে- বাবার মৃত্যুর গল্প, মায়ের শেষ সম্বল, বোনের গহনা বিক্রির গল্প। আছে অভাব-অনটন, পায়ে পরানো সমাজের নানান শিকল ভাঙার গল্প।

ওই সব বাধা একটা একটা করে ভেঙে, একটা একটা করে লড়াই জিতে তাদের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে একাদশ শ্রেণির ইংরেজি প্রথমপত্রের পাঠ্য বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘দ্য আনবিটেন গার্লস (অপরাজেয় মেয়েরা)।’ সানজিদা, আঁখি, মারিয়াদের ওই অপরাজেয় তকমায় একটু বোধ হয় কমতি ছিল।

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে ওই গল্পে নতুন মাত্রা দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ছোটগল্পের বৃত্ত ভেঙে ওদের গল্পটা যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য পেয়েছে। ওরা এখন শুধু বয়সভিত্তিক নয় দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন। ওরা এখন সবখানেই ‘দ্য আনবিটেন গার্লস’।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button