শিক্ষা

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৭৫ শতাংশ

ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর – সরকারি হিসাবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার যাই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝরে পড়ছে। ১২ বছর শিক্ষাজীবনে টিকে থাকা শিক্ষার্থীর হার কোনোভবেই ২৫ শতাংশের বেশি হবে না।

সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মালালা ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের (পপি) নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম সরকার।

মোরশেদ আলম জানান, হাওর, চরাঞ্চল ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার নারী ও শিশুরা। এসব অঞ্চলে জানুয়ারি থেকে দু’মাস ধান চাষ ও কাটার সময় থাকায় জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা মাঠে কর্মরত থাকে। ফলে শিক্ষাবর্ষের বড় একটি সময় তাদের পড়ালেখা হয় না। শিক্ষাবর্ষের সময় পরিবর্তনের ব্যাপারে সরকারকে বিভিন্ন সময় অবহিত করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ জানান, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির হার ৬০ শতাংশ। তাদের মধ্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত টিকে থাকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এসে অবশিষ্ট থাকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী। আবার এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যারা উত্তীর্ণ হয়ে ফেরেন তাঁদের শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে সংশয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালে। ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্ধেক সময় চলে গেলেও অর্জন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। করোনার দুই বছরে এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা আরও পিছিয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, করোনায় শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছে। শিক্ষার ঘাটতি পূরণ করতে হলে প্রথমে আমাদের ঘাটতির কথা স্বীকার করতে হবে। এ ঘাটতি পূরণে কমপক্ষে দুই বছরের পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্বের সব দেশেই এই ঘাটতি হয়েছে। তারা তা স্বীকার করে ঘাটতি পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সেই কাজ না করেই আবার নতুন কারিকুলাম নিয়ে কাজ করছি।

শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে এই শিক্ষাবিদ জানান, এর আগে আমরা বারবার শিক্ষা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছি। তবে বর্তমানে সংস্কার নয়, রূপান্তর প্রয়োজন। শিক্ষায় প্রথম বাধা অর্থায়ন, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘প্রাথমিক’, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক’ এবং ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা’ এই তিন ভাগে বিভক্তিকরণকে শিক্ষার মানোন্নয়নের অন্যতম আরেকটি বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পাঠ করেন মালালা ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ইনচার্জ মোশাররফ তানসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকে ভর্তির হার ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ। তবে ঝরে পড়ার হার ৪২ শতাংশ। ভর্তির দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। তবে ঝরে পড়ার হারও বেশি। নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে এ সময় মালালা ফাউন্ডেশন থেকে তিনটি দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের মতামতের মূল্যায়ন, ন্যায্যতাভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক বৈশ্বিক কর্মপন্থা তৈরি করা এবং শিক্ষার সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button