দক্ষিণ এশিয়া

ভারতে দলিত ২ বোনকে ধর্ষণ, হত্যার পর মৃতদেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

নয়াদিল্লী, ১৫ সেপ্টেম্বর – আখখেত থেকে দুই দলিত নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ফের একবার খবরের শিরোনামে ভারতের উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলা। এই ঘটনায় নাবালিকাদের পরিবারের তরফে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলাও রুজুও হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে।

লখিমপুর খেরির পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট সঞ্জীব সুমন জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও, পালানোর চেষ্টা করা জুনায়েদ নামে একজনকে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে গ্রেপ্তার করা হয় । তাকে পায়ে গুলি করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত মোট ৬ জন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্য় এসেছে পুলিশের হাতে।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন মৃত দলিত নাবালিকার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও পুলিশের এই বক্তব্য মানতে নারাজ নাবালিকাদের মা। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে ওই দুই ব্যক্তি স্বীকার করেছে, ওই দুই দলিত নাবালিকাকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে তারা।

সুমন জানিয়েছেন, এই দুই ব্যক্তির প্ররোচনায় বুধবার সন্ধেবেলায় নিজেদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই দু’জন স্বীকার করেছে, তারা নাবালিকাদের ধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।’ ৬ জনের মধ্যে আরও দু’জন মৃতদেহ দুটিকে ওড়না দিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিতে সাহায্য় করেছে।

ময়না তদন্তের রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়েছে, নাবালিকাদের ধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এবং যাতে এটিকে আত্মহত্যা মনে হয় তাই মৃতদেহগুলিকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছে অভিযুক্তরা।

অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ অরুণ কুমার সিং জানিয়েছেন, নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুনের জন্য), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত দেওয়ার জন্য), ৪৫২ (অবৈধভাবে গৃহে অনুপ্রবেশের জন্য) এবং ৩৭৬ (ধর্ষণের জন্য) ধারার অধীনে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইনের ৩ এবং ৪ ধারার অধীনেও মামলা রুজু হয়েছে।

বুধবার বিকেলে ১৫ ও ১৭ বছরের দুই নাবালিকার দেহ লখিমপুর খেরির একটি আখ খেতের কাছে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমেই নাবালিকাদের মা সংবাদ মাধ্যমের কাছে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ করেছিলেন।

তিনি জানিয়েছিলেন, পাশের গ্রামের তিন ব্যক্তি বাইকে করে তার মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। তার মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরেই আখের খেত থেকে এক কিলোমিটার দূরেই একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাদের দেহ উদ্ধার হয়।

তারপরই সেখানে জড়ো হন গ্রামবাসীরা। অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে অবরোধ, বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তারপরই পুলিশ মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তদন্তের আশ্বাস দেন। আর এই ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্য়েই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করল পুলিশ।

এদিকে, উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে আক্রমণ করেছেন একাধিক বিরোধী নেতা। সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব ঘটনাটিকে ২০২০ সালের হাতরাস মামলার পুনরাবৃত্তি বলে অভিহিত করেছেন যেখানে একটি দলিত মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং এএপি সাংসদ সঞ্জয় সিং সরকারকেও দায়ী করেছেন।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button