অনলাইনে লোভনীয় অফার দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা
ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর – দিন দিন বেড়েই চলেছে অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ। বিক্রয় ডটকম ও ফেসবুকে লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। ওই চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চক্রের মূল হোতা মো. হারুনুর রউফ খান মজলীস ওরফে মুন (৪২) এবং তার সহযোগী পার্থ বিশ্বাস (২৫)।
বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অভিযুক্তদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, প্যাড, সীল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা বহুল প্রচলিত অনলাইন শপ ‘বিক্রয় ডটকম’ ও ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করে ‘মুন অটোমোবাইলস্’ প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতরাণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক আছে আরও ৫০ হাজারের বেশি। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজেই পণ্য সামগ্রী ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছিলো চক্রটি।
নতুন গাড়ি আমদানি করার নামে আবার কখনও মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোনে অবিশ্বাস্য লোভনীয় সব অফার দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে আসছিল প্রতারক চক্রটি। এক কোটি টাকার নিশান গাড়ির দাম মাত্র ৫৪ লাখ টাকা! ৪৫ দিনের মধ্যে গাড়ি ডেলিভারি দেয়ার অফারের ফাঁদে পড়ে অর্ধকোটি টাকারও বেশি হারিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, একটি নিশান গাড়ি দেয়ার কথা ছিল। প্রথমে তাকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়। এক মাসের মধ্যে গাড়িটি না দেয়ার কারণে, আমি বুঝতে পারলাম যে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি, তখন গুলশান থানায় জিডি করেছি।
র্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল আল মোমেন বলেন, দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে গাড়িতে ছাড় দেয়া হবে বলে প্রচার করা হতো। এরপর তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিত। তারা বিভিন্ন সময় অফিস ও বাসা ঘন ঘন পরিবর্তন করে মানুষকে প্রতারণা করে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, অনলাইন শপ বিক্রয় ডটকম ও ফেসবুক ব্যবহার করে চক্রটি আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলে আসছিল গ্রাহকদের।
২০১০ সাল থেকে মুন অটো নামে একটি প্রতিষ্ঠান গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ইটিসি ভ্যালি নামে অনলাইন ভিত্তিক শপ চালু করে তারা।
র্যাব জানায়, অভিযুক্ত হারুনুর রউফ খান মজলীসকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ২০১০ সালে রাজধানীর গুলশান, নিকেতন আবাসিক এলাকায় “মুন অটোমোবাইলস্” নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন। পরে তিনি বহুল প্রচলিত অনলাইন শপ ‘বিক্রয় ডটকম’ ও ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করে তার ব্যবসার প্রসার ঘটান।
তিনি প্রথমে নামী দামী গাড়ীর মূল্য হ্রাস করে অল্প দামে বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেন। ক্রেতারা লোভনীয় বিজ্ঞাপনে তার সাথে যোগাযোগ করলে গাড়ীর কাগজপত্র দেখিয়ে গাড়ী পছন্দ করলে গাড়ীর বুকিং বাবদ দুই থেকে তিন লাখ টাকা এবং শুল্ক পরিশোধ বাবদ এক থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করেন এবং বাকী টাকা গাড়ী ডেলিভারীর সময় পরিশোধের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি ডেলিভারী না করায় ক্রেতারা গাড়ির জন্য চাপ প্রয়োগ করলে অভিযুক্ত তার পরিচিত বিভিন্ন গাড়ির শোরুমে নিয়ে গিয়ে গাড়ি দেখিয়ে আরও সময় ক্ষেপন করতেন।
ক্রেতারা যখন ওইসব শোরুমে গাড়ি জন্য আবারও যোগাযোগ করেন, তখন শোরুম কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে গাড়ি বিক্রয়ের ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানায়। পরে অভিযুক্তকে ফোন দিলে টাকা ফেরত দিতে ২/৩ দিনের সময় নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকেন এবং বারবার তার বাসস্থান ও অফিস পরিবর্তনসহ মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন।
অভিযুক্ত হারুনুর রউফ খান মজলীস সম্পর্কে আরও জানা যায়, তিনি মূলত গাড়ি বিক্রির নামে গাড়ির প্রকৃত মূল্য না দিয়ে কম মূল্যে বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াই তার পেশা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২