শিক্ষা

যশোর শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির সনদপত্রে একটি শব্দের ভুলে ছাপতে হবে আবার

যশোর, ১৪ সেপ্টেম্বর – যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ২০২১-এর সনদপত্রে একটি শব্দের ভুল নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষা বোর্ড। সনদপত্রে ইংরেজিতে ‘’Higher’’-এর স্থলে লেখা হয়েছে ‘Highre’। এ ধরণের ভুলের কারণে নতুন করে ছাপতে হবে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার সনদ। সনদপত্র ছাপতে বোর্ডের আর্থিক ক্ষতিও হবে। তবে বোর্ড চেয়ারম্যানের দাবি, ক্ষতির দায় বোর্ড নেবে না, যার বা যাদের অবহেলায় এই ভুল, তাদের ওপর বর্তাবে।

অভিযোগ রয়েছে, কাজের প্রথমেই এই ভুল ধরা পড়ার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নেননি। বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার যে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তার কাগজ কেনা হয় সাধারণত অস্ট্রেলিয়া থেকে। কোটেশনের মাধ্যমে কাগজ কেনার পর সরকার নিয়ন্ত্রিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে বোর্ডের মনোগ্রাম, তার নিচে বড় অক্ষরে শিক্ষা বোর্ডের ও পরীক্ষার সালসহ নাম ছাপা হয়। এর নিচের অংশ ছাপা হয় শিক্ষা বোডের্র কম্পিউটার বিভাগ থেকে। সেখানে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কেন্দ্রের নাম ও নম্বর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, প্রাপ্ত জিপিএসহ পরীক্ষার নাম এবং ফলপ্রকাশের তারিখসহ অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করা হয়।

নিচের অংশ ছাপার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির পর একটি নমুনা সনদপত্র তৈরি করা হয়। ওই নমুনা ছেপে সংশোধনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগসহ সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চূড়ান্ত করলে ছাপার কাজ শুরু হয়।

২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এসব পদ্ধতি অনুসরণ করাও হয়। এরপরও সনদপত্রের নিচের অংশে রোল নম্বরের পর যেখানে পরীক্ষার নাম লেখা হয়েছে সেখানে হাইয়ার (উচ্চ) শব্দটি ভুল বানানে লেখা থাকা অবস্থায় ছাপা হয়ে যায়। পরে সনদপত্রসহ অন্যান্য ভুল পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের সময় বানানের ভুলটি ধরা পড়ে। সনদপত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করেন।

এদিকে বানান ভুল ধরা পড়ার পর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ভুল বানানটি কালো কালি দিয়ে ঢেকে তার ওপর সংশোধিত বানান সংযোজন করার। সে কাজটিও করা হয়। কিন্তু বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি পক্ষ এমন কালিযুক্ত সনদপত্র শিক্ষার্থীদের কাছে না দেওয়ার জন্য দাবি তুললে সংশোধিত ওই সনদপত্র আর দেওয়া হয়নি। সে কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর ওই সনদে স্বাক্ষরও করেননি।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র সনদপত্রে ভুল বানানের কথা স্বীকার করে বলেন, যে-কোনোভাবে ভুল রয়ে গেছে। এ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে কিনা তা সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ২০২১ সালে পাস করা ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪১ শিক্ষার্থীর জন্য এই সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই ভুলের দায় কে নেবে ও ভুলের দায়ে বোর্ড আর্থিক ক্ষতির শিকার কেন হবে?

চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব ‘হাইয়ার’ বানান ভুল হয়েছে বা সার্টিফিকেটে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এর দায় বোর্ড নেবে না। তদন্ত করা হবে। ভুল যে বা যাদের কারণে হয়েছে প্রত্যেককে এর দায় বহন করতে হবে, বোর্ড কোনো আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে না।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের নির্ভুল সনদপত্র দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একটি সার্টিফিকেট তৈরিতে শুধু বোর্ডে ছাপা থেকে শুরু করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পর্যন্ত স্বাক্ষর, দলবদ্ধভাবে তথ্য যাচাই, স্বাক্ষর প্রদান, অভ্যন্তরীণ পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে ৬৪ টাকা করে খরচ হয়। তা ছাড়া সিকিউরিটি প্রেস ও সেখানকার ছাপাসহ পরিবহন ও অন্যান্য খাতে প্রায় ২৫ টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে সনদপত্র শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছাতে বোর্ডের ব্যয় হয় প্রতিটির জন্য ৮৯ টাকা। এ হিসাবে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪১টি সনদপত্রের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের ব্যয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৫ টাকা। যদিও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এত টাকা খরচের দাবি নাকচ করেছেন। একইভাবে বোর্ড চেয়ারম্যানও কোন খাতে কত খরচ জানাতে চাননি।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button