অপরাধ

যে কারণে ফের তদন্তের নির্দেশ

ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর – সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল আপন দুই ভাই। ছিলেন ফরিদপুরের ত্রাস। অল্প সময়ে গড়েছেন বিপুল সহায় সম্পত্তি। ঘনিষ্ঠ ৮ জনের সহযোগিতায় অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও সিন্ডিকেট করে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, ও কমিশন বাণিজ্য করে দুই হাজার পাঁচশত পয়ত্রিশ কোটি এগার লাখ চুয়াল্লিশ হাজার টাকা অর্জন করে। এসব অর্থের কোনো বৈধ উৎস বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট পায়নি। আর তারা এসব অর্থ ১৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা এবং অপরাপর সহায়তাকারীদের মধ্যে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনপূর্বক বণ্টন করে বণ্টনকৃত টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে। আদালতে দাখিল করা চার্জশীটে এমন তথ্য রয়েছে। এছাড়া উপার্জিত অর্থ দ্বারা দুই ভাই ৪৮৭টি জমির দলিলে মোট ১৭৭৮০১ শতাংশ জমির প্রথমে জোরপূর্বক দখল পরবর্তীতে নামমাত্র মূল্যে মালিক হন। আলোচিত এই মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৪২ জনকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট প্রদান করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অব্যাহতি দেয়াদের একজন নিশান মাহমুদ শামীম ও অপরজন মো. বিল্লাল হোসেন।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এই দুই আসামি।
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে এসব বিষয় নজরে আনেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক ফরিদপুরের বহুল আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চলমান মামলাটি ফের তদন্তের আদেশ দেন আদালত। তদন্তে কিছু অসঙ্গতি থাকায় আদালত সিআইডিকে মামলাটি পুনরায় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১৩ই অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট আদালতের এপিপি মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী ৪নং আসামি বিল্লাল হোসেন ও ৬নং আসামি নিশান মাহমুদ শামীমকে মামলার অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি অন্যান্য আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশিত অপরাপর আসামিদের নাম ও সম্পৃক্ততা একই পর্যায়ভুক্ত হওয়া স্বত্ত্বেও তন্মধ্যে কতিপয় আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি প্রদানকারী আসামিদের সাক্ষ্যগ্রহণ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে বিধায় এরূপ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারী কোনো আসামিকে অভিযোগপত্র হতে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ তদন্তকারী সংস্থার নাই। এমনকি একাধিক আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশিত অন্যান্য আসামিদেরও মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ তদন্তকারী সংস্থার নেই। এ ছাড়া, ৪৮৭টি দলিলে বরকত ও রুবেলের সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৩৮৮ বিঘা জমি। কিন্তু দলিল জব্দ করা হয়েছে ১১৩টি। বাকি দলিলগুলো কোথায়? এসব সহ আরও কয়েকটি কারণে আদালত মামলাটি ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এরইমধ্যে মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশের কপি সিআইডি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সময়ে সময়ে এজাহারভুক্ত আসামিদেরসহ অপরাপর আসামিদের যথাক্রমে মো. সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, মো. বিল্লাল হোসেন, আশিকুর রহমান ফরহান, মো. মাহফুজুর রহমান মামুন, মো. মনিরুজ্জামান মামুন, সুমন সাহা, আনোয়ার হোসেন ওযফে আবু ফকির, মো. আ. জলিল শেখ, মো. জাফর ইকবাল ওরফে হারুন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। উল্লেখিত গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ১নং, ২নং, ৩নং, ৪নং, ৫নং ও ৬নং আসামিগণ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজেদেরকে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এমতাবস্থায় মামলার অভিযোগপত্রে দেখা যায়, আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী ৪নং আসামি বিল্লাল হোসেন ও ৬নং আসামি নিশান মাহমুদ শামীমকে মামলার অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি অন্যান্য আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশিত অপরাপর আসামিদের নাম ও সম্পৃক্ততা একই পর্যায়ভুক্ত হওয়া স্বত্ত্বেও তন্মধ্যে কতিপয় আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি প্রদানকারী আসামীদের সাক্ষ্য গ্রহণ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে বিধায় এরূপ ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারী কোনো আসামীকে অভিযোগপত্র হইতে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ তদন্তকারী সংস্থার নাই। এমনকি একাধিক আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশিত অন্যান্য আসামীদেরও মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ তদন্তকারী সংস্থার নেই। তদন্তকারী সংস্থা যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছে। নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩রা মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা সিএমএম আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।

একই বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর এই মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে আদেশ দেন ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। চার্জশীট ভুক্ত আসামীরা হলেন- দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, ফরিদপুর সদরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর ও যুবলীগের নেতা এ এইচ এম ফুয়াদ। চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন- শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আশিকুর রহমান ওরফে ফারহান, যুবলীগের নেতা ফাহান বিন ওয়াজেদ ফাইন ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড ওরফে ডেভিড, মোহাম্মদ আলী মিনার ও মো. তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম। তদন্ত সূত্র জানায়, ৭২ পৃষ্ঠা চার্জশিটে ৪৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অপর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ৪২ জন সহযোগীর মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছে।

সূত্র: মানবজমিন
আইএ/ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button