কম্বোডিয়ায় ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে বানানো হয়েছে সাইবার ক্রীতদাস
ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর – কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কম্বোডিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে ‘সাইবার ক্রীতদাস’ বানানোর অভিযোগে মূল হোতা নাজমুল ইসলামসহ (৩০) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫) এবং মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েত (৫৭)।
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, চারটি মোবাইল ফোন, রেজিস্ট্রার একটি, মানবপাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র ২৫০ পাতা এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফারজানা হক বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। চক্রের মূল হোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করেন। কম্বোডিয়ায় যাওয়ার খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। আগ্রহী বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ার টুরিস্ট ই-ভিসা করা হয়। তারপর তাদের বিমানযোগে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়। কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর নাজমুল তার সহযোগী কম্বোডিয়া প্রবাসী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় প্রথমে ভুক্তভোগীদের প্রবাসী আরিফের হোটেলে নিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করার পর তাদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কম্বোডিয়া প্রবাসী কামাল ওরফে লায়ন কামাল ও আতিকের সহায়তায় একটি বিদেশি ট্রেনিং সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিদেশি প্রশিক্ষকরা ভুক্তভোগীদের ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে কীভাবে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোনড ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাতের কৌশল, ভুয়া নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার নাম করে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল শেখানো হয়।
র্যাব জানায়, কেউ টার্গেট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতন করা হয়। তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ট্রেনিং শেষে ভুক্তভোগীদের একটি বিদেশি কোম্পানির কাছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানেও একই কাজ বড় পরিসরে করানো হয়। চক্রটি পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাইবার ক্রীতদাস হিসেবে কম্বোডিয়ায় পাচার করেছে।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২