ইউরোপ

মন্দা রেখে বিদায় জনসনের

লন্ডন, ০৫ সেপ্টেম্বর – যুক্তরাজ্যে এমন একসময়ে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যখন দেশটি ধীরে ধীরে একটি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এই মন্দার অন্যতম কারিগর হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে সারাবিশ্বেই জ্বালানির দাম বেড়েছে। তবে যুক্তরাজ্যে এই বৃদ্ধির হার ছিল অস্বাভাবিক। ফলে শুধু জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই দেশটিতে এক ধরনের মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন উত্তরসূরির জন্য দ্বন্দ্ব-বিভেদ আর বিভক্তিতে ভরা একটি দেশ রেখে যাচ্ছেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে কে আসছেন- তা আজকেই জানা যাবে। এই মুহূর্তে এগিয়ে থাকা লিজ ট্রাস অথবা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে কঠিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। জনসন তাঁর পদত্যাগের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার দিন থেকেই আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি পড়তির দিকে। এর সঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটির বার্ষিক মুদ্রাস্ম্ফীতি এখন ১০ শতাংশের ওপরে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের ক্রমাগত অবনমন ঘটছেই। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের পর ব্রিটিশ পাউন্ড এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বন্দর, ট্রেন ও মেইলরুমের কয়েক হাজার হতাশ শ্রমিককে ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করেছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ১৯৯০ সালের পর থেকে দ্রুততম হারে সুদ বাড়াচ্ছে, যার ফলে দেশটিতে ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যদিও বেকারত্বের হার কম, তবু অনেক অর্থনীতিবিদ একটি মন্দার আশঙ্কা করছেন; যা অন্তত এক বছর বা তারও বেশি স্থায়ী এবং শিগগির শুরু হবে। এগুলো অবশ্যই নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করবে। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে আরও খারাপ হতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের অনুমান, জ্বালানি সংকট তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ম্ফীতি ১৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠবে। সিটি গ্রুপ ধারণা করছে, দেশের মূল্যস্ম্ফীতি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ১৮ শতাংশে উঠতে পারে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বর্তমানের ধারাবাহিকতায় বাড়তে থাকলে মূল্যস্ম্ফীতি ২২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে গোল্ডম্যান স্যাক্স।

তবে সবচেয়ে যে সমস্যাটি নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য সত্যিকার অর্থেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে তা হচ্ছে, বিদ্যুতের আকাশছোঁয়া খরচ। এই একটি কারণেই দেশটিতে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া সীমিত জ্বালানির মজুত নিয়ে আসন্ন শীতে লাখ লাখ মানুষের টেবিলের খাবার ও ঘর গরম রাখাও অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে জনসনের উত্তরসূরির জন্য। বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দ্রুত কিছু করা না হলে এই শীতেই মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় মৃত্যু বাড়বে।

যুক্তরাজ্যে আগামী অক্টোবরে জ্বালানি বিল চোখে জল আনার পর্যায়ে বাড়তে চলেছে, যা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হবে বহু ব্রিটিশ নাগরিককে। সামনের মাসে জ্বালানি বিল ৮০ শতাংশ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে একটি পরিবারকে বছরে সাড়ে তিন হাজার পাউন্ডের ওপরে জ্বালানি বিল দিতে হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এই অঙ্কটি ৫ হাজার এবং এপ্রিলে ৬ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কভিড মহামারি-পরবর্তী জনগণের খরচের খাতের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সতর্ক করেছে, আগামী মাসেই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি মন্দার মধ্যে পড়বে।

ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ইকোনমিস্ট বেন জারাঙ্কো বলেছেন, ‘জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জটি হলো- ব্রিটেনের পরিবারগুলো জ্বালানি শক্তি ব্যবহার করে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলো। বর্তমানে টিকে থাকতে হলে তাদের সত্যিকার অর্থেই সংগ্রাম করতে হবে।’

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

Back to top button