ইসলাম

উম্মে সালমা (রা.)-এর বিচক্ষণতা

আলেমা সামিয়া আফরীন

নবীজির পবিত্র স্ত্রীগণের মধ্যে আয়েশা (রা.)-এর পর সবচেয়ে বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নারী উম্মে সালমা (রা.)। যিনি চতুর্থ হিজরিতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নবীজির স্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন সময় জাতীয় জীবনের জটিল সমস্যা সমাধানে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন মহীয়সী এই নারী। যার কারণে ইতিহাস তাঁকে রাষ্ট্র প্রধানের রাজনৈতিক উপদেষ্টার মর্যাদায় স্মরণ করে থাকে।

ষষ্ঠ হিজরিতে মহানবী (সা.) মক্কা অভিযানের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবির বিরাট বাহিনী নিয়ে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌঁছে তিনি কোরাইশদের বাধার সম্মুখীন হন। নানা ঘটনাচক্রের পর মুসলিম শিবির থেকে মক্কার ধনাঢ্য ব্যক্তি উসমান ইবনে আফফান (রা.) ও কোরাইশ শিবির থেকে সুহাইল ইবনে আমরের দুতিয়ালিতে একটি শান্তির চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বাহ্যত এই চুক্তি ছিল মহানবী (সা.) ও মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর। কিন্তু শান্তির স্বার্থে ও ভবিষ্যতের বৃহত্তর সুফলের আশা নিয়ে মহানবী (সা.) এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্ত ও চুক্তি স্বাক্ষরকালে মক্কার মুশরিকদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে মুসলমানরা ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিল।
বিপুলসংখ্যক জানবাজ যোদ্ধা সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও মুশরিকদের অযৌক্তি সব শর্ত মেনে নেওয়াকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছিল না উমর (রা.) এর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাহাবিও। শেষ পর্যন্ত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মুসলমানরা উমরা পালন না করেই কোরবানির জন্য সঙ্গে আনা পশুগুলো হুদায়বিয়াতেই জবাই করতে হবে আর এখানেই উমরার ইহরাম খুলতে হবে বলে ফায়সালা হয়।

মহানবী (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন, তোমরা কোরবানির পশু জবাই করো। মাথার চুল ছেঁটে ফেলো। ইহরাম খুলে স্বাভাবিক হয়ে যাও। কিন্তু আশ্চর্য যে যারা নিজের জান বাজি রেখে তাঁর নির্দেশে প্রাণ দিতে হুদাইবিয়া প্রান্তর পর্যন্ত এসেছেন, তাঁরা এখন আদেশ পালনে তৎপর হচ্ছেন না। মহানবী (সা.) আদেশটি তিনবার ঘোষণা করলেন। কিন্তু কেউ আদেশ পালনে অগ্রসর হলো না। এ অবস্থা দেখে তিনি বিষণ্ন মনে তাঁবুতে ঢুকে উম্মে সালামাকে লোকদের অবস্থার কথা জানালেন। নেতৃত্বের আনুগত্য ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর চেয়ে গভীর ও জটিল সংকট আর কিছু হতে পারে না।

এই সংকট সমাধানে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এলেন উম্মে সালামা (রা.)। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কি চান যে তারা আপনার আদেশ পালন করুক। তাহলে আপনি তাদের কারো সঙ্গে একটি কথাও বলবেন না। শুধু সবার সামনে গিয়ে আপনার উটনীটি নহর (জবাই) করুন। তারপর আপনার মাথা মুণ্ডানোর ব্যবস্থা করুন। এই পরামর্শ পেয়ে তিনি তাঁবু হতে বের হলেন এবং কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে নিজের উটনী নহর করে মাথা মুণ্ডন করলেন। লোকেরা যখন এই দৃশ্য দেখল, সবাই তাদের কোরবানির পশু নহর করল। একজন আরেকজনের মাথা মুণ্ডন শুরু করল। এতক্ষণ তারা ভাবছিল যে মুশরিকদের সঙ্গে দৃশ্যত অবমাননাকর চুক্তি হয়তো পুনর্বিবেচনা হবে, তাই তারা আদেশ পালনে গরিমসি করছিল। কিন্তু যখন প্রমাণিত হলো যে নবী (সা.) তাঁর সিদ্ধান্ত ও আদেশের ব্যাপারে অবিচল। তখন তারা সেই আদেশ পালনে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। বস্তুত জাতীয় জীবনের সমস্যা সমাধানে উম্মে সালমার এই বিচক্ষণতা ও ভূমিকা মুসলিম মহিলাদের জন্য সমাজ ও জাতীয় জীবনের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।

আইএ

Back to top button