জাতীয়

যুক্ত স্বাধীন বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু

ঢাকা, ৩১ আগস্ট – শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যুক্ত স্বাধীন বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। যে সময় ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাচ্ছে, তখন বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন, এই স্বাধীনতা বাঙালির জীবনের প্রকৃত স্বাধীনতা নয়।

বুধবার ঢাকা কলেজ আয়োজিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশভাগের ঠিক আগে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোওরাওয়ার্দী ও শরত বোসের সঙ্গে মিলে একটি যুক্ত স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ধরেই নিয়েছিলেন এই এলাকার বাংলা ভাষাভাষীর মানুষদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু যখন একেবারেই ধর্মের ভিত্তিতে দুইভাগ হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান হলো, সেই আন্দোলনে তিনি যুক্ত ছিলেন বটে কিন্তু স্বাধীন বাংলার যে প্রস্তাব তিনি করেছিলেন নানান কারণে তা সম্ভব হয়নি। সেটি হলে এই উপমহাদেশের সমাজ চিত্রটা অন্য রকম হতে পারতো।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যে সময় ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাচ্ছে, তখন বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন, এই স্বাধীনতা বাঙালির জীবনের প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। সে কারণে গোড়াতেই তিনি বাঙালির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হলেন। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি যুব সংগঠন করলেন— গণতান্ত্রিক যুবলীগ। তার কয়েক মাস পরেই ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ করলেন। কারণ তিনি পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলা তথা বাঙালির প্রাণের যে অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না, তা গোড়াতেই অনুধাবন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন— বাঙালিকে তাদের নিজের অধিকার নিজেদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সম্প্রতি নারীর পোশাক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শালীনতার প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বার বার প্রশ্ন তোলে আমি বাঙালি না মুসলমান, এ প্রশ্নের মীমাংসা তো আগেই হয়ে গেছে। আমি বাঙালিও, আমি মুসলমানও। কিংবা আমি বাঙালি, আমি খ্রিষ্টান, কিংবা আমি বাঙালি এবং আমি হিন্দু, কিংবা আমি বাঙালি আমি বৌদ্ধ, আমার ধর্ম আমার জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু নয়।

তারপরও বার বার কেনো এই প্রশ্নগুলোকে টেনে আনা হয়? আমার সংস্কৃতিকে কেনো ছুড়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়? আমাদের স্মৃতিকে কেনো মুছে ফেলবার চেষ্টা করা হয়? আবহমান কালের যে সংস্কৃতি কেনো নানান প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়? নানানভাবে শালিনতার প্রশ্ন তোলা হয়, শালীনতা কি শুধু নারীর পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ? শালীনতা শুধু পোশাকে নয়, পোশাক, আচার-আচরণ, কথা কাজ, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তার মধ্যে শালীনতা দরকার। শালীনতা শুধু নারীর নয় পুরুষ ও প্রত্যেকটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য। যারা প্রশ্নগুলো তোলেন, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রশ্ন তোলেন, আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি সেই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে আমাদের বিপথে চালিত করবার জন্য প্রশ্ন তোলেন।

শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সজাগ থাকতে হবে। এই বাংলায় হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে, ইতিহাস ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের সমৃদ্ধ ভাষা রয়েছে। এই ঢাকার অদূরে ওয়ারি বটেশ্বরে অন্তত আড়াই হাজার বছর আগেই এই ভূখণ্ডের মানুষ একটি পরিকল্পিত নগর জীবন-যাপন করতো। আমি সেই সভ্যতার অংশ। সব সমাজের এতো সমৃদ্ধ অতীত থাকে না। পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ আছে যাদের তিনশ বছর আগে গেলেও সমৃদ্ধ ইতিহাস নেই, যেটুকু আছে সেটুকু শোষণের। এই ভূখণ্ডে অনেক ধরনের ভাষার মানুষ এসেছে, অনেক সংস্কৃতির মানুষ এসেছে। সবাইকে নিয়ে আমরা একটা শান্তি ও সম্প্রীতির সমাজ তৈরি করেছিলাম। আমরা সেই ঐতিহ্যকে কেনো ভুলে যাবো? আমাদের ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। আপনারা এ দেশকে নিয়ে নিজের ভাষা-সাহিত্যকে নিয়ে ভাবুন।’

শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে বিজ্ঞান প্রযুক্ত এবং ভবিষ্যতকে নিয়েও ভাবার আহ্বান জানান।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/৩১ আগস্ট ২০২২

Back to top button