গুম-খুনের জন্য কমিশন করে জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি
ঢাকা, ৩০ আগস্ট – ১৯৭৭ সালে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের গুম-খুনের অভিযোগে কমিশন গঠন করে সাবেক রাষ্ট্রপাতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘১৯৭৭ সালে খুনি জিয়ার গুম ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের’ সমন্বয়ক কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীর বিক্রম। আলোচনা সভা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের কষ্টের কথা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বিচারপতি বলে গেলেন মৃত ব্যক্তিদের বিচার হয় না। তবে গণদাবিতে অনেক কিছুই হয়। আইনের বাইরেও অনেক কিছু করতে হয়। পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছি, সেটা তো আইন মেনে করিনি। জাতির প্রয়োজনে আইনের ব্যত্যয়ও ঘটে। পৃথিবীর অনেক দেশে মরণোত্তর বিচার হয়েছে। সাজা না পেলেও ইতিহাসে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে অনেকেই। খুনি জিয়া ও তার সহযোগীদের মরণোত্তর বিচার করা হোক। এটা করা বেআইনি হবে না। কী ঘটেছে সেটার সত্য উদঘাটন করা, প্রতিষ্ঠা করা এটাও আইনের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে জিয়ার মরণোত্তর বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয় ও জরুরি। আমি একমত পোষণ করছি।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে খলনায়ক জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা এই দেশে থাকবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। এক ও অভিন্ন। তারা মনে করেছিল ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করলেই মুজিবের আদর্শকে হত্যা করা যাবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পেরোনোর পরে সারাবিশ্ব জানে জীবিত বঙ্গবন্ধুর থেকে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী। ]তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অসহায় আর্তনাদ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খুনি জিয়া অনেককে বিনাবিচারে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কোনো নিয়ম মানে নাই। লাশটা পর্যন্ত দেয়নি। আজকে তাদের আর্তনাদ শুনলাম। আমার বাবার লাশটা কোথায়? আমি আমার বাবার কবর জিয়ারত করতে পারব না? গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার আমার নিকট এসেছিল। আমি নিজে তদন্ত করে যা পেয়ছি, কারাগারে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে আজকে আর রায় এসেছে তিন মাস পর। অরাজকতার একটা সীমা থাকা উচিত। খুনি জিয়া কোনো কিছু মানে নাই।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আজ একটি নারকীয় দিবস। এরকম নারকীয় দিবস আমাদের দেশে অনেক হয়েছে, যার শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে। সেদিন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছিল, এরকমই আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৭ সালে। এসব কিছুর মূল নেতৃত্বে ছিল খুনি জিয়াউর রহমান।
কমিশন করে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সভায় সার্জেন্ট আবুল কাসেমের মেয়ে বিলকিস বেগম বলেন, বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর আমাদের কেউ কোনো খোঁজ রাখেনি। বাবা চলে গেলেন আর ফিরে আসেননি। আজও আমার মাকে হাসপাতালে দিয়ে আসতে গিয়ে আমার এখানে দেরি হয়েছে। চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সময় পার করেছি, জানি না কোথায় বাবার কবর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন ১৯৭৭ সালে ভুক্তভোগীরা বিচার যেন পান। নতুন করে আইন পাস করে তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করছি।
সমাবেশ থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো— ১৯৭৭ সনের অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা জিয়াউর রহমানের সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা; সেদিন যারা সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করা; সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা, বিমান বাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি হয়েছে, তাদের শহীদ হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতি তৈরি করা; সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সেই সকল সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া; সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা; অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে খুনি জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা এবং ষড়যন্ত্রকারী জিয়াউর রহমানের তথাকথিত কবর জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে অপসারণ করা।
সূত্র: বাংলানিউজ
এম ইউ/৩০ আগস্ট ২০২২