জাতীয়

নেতাকর্মীদের লড়াইয়ে সন্তুষ্ট বিএনপি, আরো কর্মসূচি আসছে

হাসান শিপলু

ঢাকা, ৩০ আগস্ট – ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলের চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে লোকসমাগম এবং নেতাকর্মীদের লড়াইয়ের মানসিকতায় সন্তুষ্ট বিএনপি। নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে এ ধরনের আরো কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় দলটি। এর মাধ্যমে বড় আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

চলমান কর্মসূচির আট দিন পার হয়েছে গতকাল সোমবার।

এই কয়েক দিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে বিএনপি। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, রাজনীতির মাঠে অনেক দিন পর আধিপত্য দেখাতে পেরেছেন নেতাকর্মীরা। হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেছেন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে এই ধরনের কর্মসূচি নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
গত রবিবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চলমান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে জাতীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ করণীয় এবং চলমান আন্দোলন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন কমিটির সদস্যরা।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলমান কর্মসূচি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর ৮১ সাংগঠনিক জেলায় আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহর, তারপর ঢাকায় বড় ধরনের জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিনির্ধারকরা বলেন, এবার বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশের চেয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশি তৎপর। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় ক্ষমতাসীনরা মাঠ দখলে রাখার এই কৌশল নিয়েছে। তাদের আচরণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি মারমুখী হবে আওয়ামী লীগ।

নেতারা আরো বলেন, আগের অনেক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কিংবা পুলিশের বাধার কারণে বিএনপি মাঠেই নামেনি। ১৪৪ ধারা জারির পর কর্মসূচি করার নজির তেমন নেই। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। হামলা ও বাধার পরও কর্মসূচি পালন করেছেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিটের তালিকায় ৪৮৭ উপজেলা, ৫১২ থানা, ৩১৪ পৌরসভা এবং চার হাজার ৫৭৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দলের হিসাবে বেশি হামলা হয়েছে যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, নরসিংদী, মাগুরায়। যশোর, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরাসহ কয়েকটি জেলায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও মাগুরায় দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর গতকাল যশোর গেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তাঁরা সেখানে হামলায় আহত নেতাকর্মীদের বাড়িতে গেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন সাড়ে ৭০০ নেতাকর্মী। কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জনের বেশি।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের পর বৃহৎ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রক্রিয়ার কাজ আবার শুরু হবে। শিগগিরই সমমনা সব দল নিয়ে একমঞ্চে উঠতে চায় দলটি, যাতে মিত্ররা যুগপৎ কর্মসূচি দিতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, চলমান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হচ্ছে দেখে আওয়ামী লীগের মাঝে ভীতি বাড়ছে। তাই হামলা ও দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনসম্পৃক্ত ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি চলবে। ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকব। ১০ সেপ্টেম্বরের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ’

সূত্র: কালের কন্ঠ
আইএ/ ৩০ আগস্ট ২০২২

Back to top button