ইউরোপ

বিপুল পরিমাণ গ্যাস পোড়াচ্ছে রাশিয়া

মস্কো, ২৬ আগস্ট – ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে রাশিয়া। এ অবস্থায় মহাদেশটির বিভিন্ন রাষ্ট্রে গ্যাস সংকট বাড়ছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে রকেট গতিতে বাড়ছে জ্বালানির দাম। কিন্তু বিকার নেই ভ্লাদিমির পুতিন শাসিত রুশ ফেডারেশনের। ফুরফুরে মেজাজে প্রতিদিন কোটি টাকার গ্যাস পুড়িয়ে যাচ্ছে দেশটি!
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। কয়েকজন বিশ্লেষকের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি।

খবরে বলা হয়, রাশিয়া দেদারসে এখন যে গ্যাস পোড়াচ্ছে, আগে তা জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। ইউরোপে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া পর থেকে বিভিন্ন দেশে এ জ্বালানির ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাশিয়া এ ক্ষতির ধার ধারছে না। ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছে পর্তোভায়া প্ল্যান্ট থেকে তারা প্রতিদিন কোটি টাকার (১০ মিলিয়ন ডলার) গ্যাস পোড়াচ্ছে। রিস্টেড এনার্জির বিশ্লেষণ অনুসারে, পর্তোভায়া প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে।

রাশিয়ার এহেন কর্মকাণ্ডে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, এত পরিমাণ গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে, যে কারণে বাতাসে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে যাচ্ছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এটি আর্কটিকের বরফের গলে যাওয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টে গ্যাস পোড়ানো সাধারণ ব্যাপার। কেননা সেখানে সাধারণত প্রযুক্তিগত বা নিরাপত্তার কারণে গ্যাস পোড়ানো হয়। কিন্তু রাশিয়া যে মাত্রায় গ্যাস পোড়াচ্ছে তা আশপাশের বিভিন্ন দেশের ক্ষতির কারণে হয়ে দাঁড়াবে।

ওহাইওর মিয়ামি ইউনিভার্সিটির স্যাটেলাইট ডেটা বিশেষজ্ঞ ড. জেসিকা ম্যাককার্টি বিবিসিকে বলেন, আমি কোনো এলএনজি প্ল্যান্টে এত পরিমাণ গ্যাস পোড়াতে দেখিনি। গত জুন থেকে এটি শুরু হয়েছে, যা এখনও শেষ হয়নি।

গ্যাস সংকট সমাধান সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ক্যাপ্টেরিও’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক ডেভিস বলেন, অনেকেই বিশ্বাস করেন, নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনে যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তা মোকাবিলা করা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যে গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে তা হয়ত নতুন কোনো প্লান্টে এলএনজি তৈরির জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিল রাশিয়ান এনার্জি কোম্পানি গ্যাজপ্রম। বর্তমান অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বিকল্প হিসেবে তারা গ্যাস পুড়িয়ে দিচ্ছে।

এটি ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ফলাফলও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ফিনল্যান্ডের এলইউটি ইউনিভার্সিটির এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর এসা ভাকিলাইনেনর মতে, দীর্ঘমেয়ামের গ্যাস পোড়ানোর কারণ হতে পারে রাশিয়া কিছু সরঞ্জাম হারিয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত। যে কারণে রাশিয়া তেল ও গ্যাস প্রক্রিয়াকরণে উচ্চমানের কোনো ভালভ তৈরি করতে পারছে না। হয়ত কিছু ভালভ ভেঙে গেছে, যা তারা প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।

অতিরিক্ত গ্যাস পোড়ানোয় পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। গবেষকদের মতে, গ্যাসের মূল উপাদান মিথেনকে নিঃসরণ করার চেয়ে পুড়িয়ে দেওয়া অনেক ভালো। যদিও এতে অত্যন্ত শক্তিশালী জলবায়ু উষ্ণায়ন ক্রিয়া রয়েছে। রাশিয়ার গ্যাস পোড়ানোর ট্র্যাক রেকর্ড অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংকের মতে, গ্যাস পোড়ানোয় দেশটি এক নম্বর। কিন্তু যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা এ কাজটি করছে, হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে জনজীবন।

নিজের দেশের তো বটেই আশপাশের অন্যান্য দেশেরও ক্ষতি করছে রাশিয়া। দ্রুতই দেশটিকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিৎ। নয়ত জলবায়ুর প্রভাব বিরাট ক্ষতি ডেকে আনবে।

সূত্র: বাংলানিউজ
এম ইউ/২৬ আগস্ট ২০২২

Back to top button