‘যত মানুষ আমাকে কষ্ট দিয়েছে সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিলাম’ এ ধরনের কথা বলা যত সহজ বাস্তবায়ন করা তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কঠিন। কিন্তু ক্ষমার মধ্যে যে স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে রাগ জিইয়ে রাখার মধ্যে সে আনন্দ আর মজা নেই। যুগে যুগে যারা মহৎ মানুষ ছিলেন তারাই এই গুণের সর্বোচ্চ প্রয়োগকারী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, ‘যখন তাদের ক্রোধ দেখা দেয়, তখন ক্ষমা প্রদর্শন করে।
’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৩৭)
কেউ যখন কাউকে ক্ষমা করে দেয় তখন আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করে দেন। যখন কোনো ব্যক্তি এভাবে কল্পনা করবে তার জন্য যে কাউকে ক্ষমা করা সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন। ’ (সুরা আন-নুর, আয়াত : ২২)
আমরা প্রতিনিয়ত ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কত অপরাধ করছি। কিন্তু আমার ভেতরে যদি ক্ষমা করার এই মহৎ গুণ থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা আমার গুনাহ এভাবে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমার মর্যাদ সমুন্নত করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করাতে সম্পদের হ্রাস হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)
কিন্তু শয়তান মানুষকে কোনোক্রমেই ক্ষমা করে দেওয়া সহ্য করে না। সে প্রতিনিয়ত মানুষকে উসকে দিতে থাকে। শয়তান যখন আমাদের বারবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাদের অন্তরকে বিষিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে, তখন আমরা এই হাদিসটি স্মরণ করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব ধরনের গিলে ফেলার ভেতর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো যখন বান্দা আল্লাহর জন্য নিজের ক্রোধকে গিলে ফেলে আর যে এ কাজ করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাকে ঈমান দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬১১৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান আছে তা অন্য কিছু সংবরণে নেই। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮৯)
ক্ষমা করার মাধ্যমে ‘মধুর প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা আছে কোরআনে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধনের চেষ্টা করে, তার সওয়াব আল্লাহর জিম্মায়। নিশ্চয়ই তিনি জালিমদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৪০)
আইএ