জাতীয়

দেশের প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনী সবসময় ঘুরে দাঁড়ায়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা, ২৬ আগস্ট – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা পথ হারিয়েছিলাম। আমরা আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর একটা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যখন ফিরে আসি তখন আমাদের ঘর-বাড়ি কিছুই ছিল না। আমাদের ব্যাংকে সঞ্চয় ছিল শূন্য। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গোটা বিশ্ব থেকে তিনি সাহায্য পেয়েছিলেন। সারা বিশ্বের মানুষ তাকে ভালোবাসতো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসতেন। কিন্তু এই ক্ষমায় তাকে যে কতখানি মূল্য দিতে হয়েছে তাও আমরা দেখলাম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে সবসময় দেখি যখন সময় আসে তারা তখন ঘুরে দাঁড়ায়। সেই ২৫শে মার্চে যেমন তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্যও যেমন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তেমনি করোনার সময়ও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন সব সময় সম্মুখ সেনা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই জন্য আমরা বোধহয় একটা স্বস্তির জায়গায় এসেছি।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. বেনজীর আহমেদ। স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মুখ্য আলোচক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাকশাল নিয়ে অনেক অসত্য কথা প্রচার করা হয়। সত্যি বলতে আওয়ামী লীগের মধ্যে বাকশাল নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে, ভয় ভীতি আছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ থেকে আসার দুই মাস পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের পরিকল্পনা করতে লাগলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতি দমন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সমস্ত সৃজনী শক্তিকে মূলধারায় নিয়ে আসা। তিনি অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বামপন্থীর দুটি ধারা। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও মস্কোপন্থী মুখ্য নেতা ছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। এই দুজনেই খুব শক্ত ভাষায় সমর্থন করলেন বাকশালকে। বঙ্গবন্ধু আরও উৎসাহ বোধ করলেন। বঙ্গবন্ধু কখনো সমাজতান্ত্রিক ছিলেন না। তিনি সমাজতন্ত্র থেকে ভালো ভালো উপাদান নিয়ে সমতাধর্মী উন্নয়ন চেয়েছিলেন।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, সমস্যা হলো ৭০সনে ২৮ শতাংশ মানুষ নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এবং তাদের দেশ-বিদেশের প্রভুরা এটাকে বড় ধরনের পরাজয় মনে করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর উদারতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মেজর ডালিমের তখন র‍্যাংক ব্যাজ নেই। তিনি গেটে আসলেন। আমি তাকে বললাম আপনি কি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন। তখন মেজর ডালিম শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বললেন, বলেই দেখেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বলার সঙ্গে সঙ্গে বললেন হ্যাঁ, নিয়ে আসো, আমার ছেলে।

সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজীবন রাজনীতি করেছেন। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন। তিনি এ দেশের মানুষকে খুবই ভালবাসতেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগে উন্নত দেশে পরিণত হতো। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তার বিকাশ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছে। যখন জাতিসত্তার বিকাশের শুরু তখনই এই জাতির একশ্রেণীর মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল। বাঙালি জাতির ক্ষেত্রেও একটি আদি পাপের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে যত সহস্ত্র বছর এই জাতি তার অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবে তত বছর এই শোক বাঙালি জাতিকে বহন করতে হবে।

আইজিপি বলেন, আজ ষোল কোটি মানুষ, তাদের ৩২ কোটি হাত, আজকে প্রমাণ করে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন কতটা প্রফেটিক ছিল। সেই কারণেই আমরা যতই শোকাহত হবো একই কারণে এই জাতিকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের সদা জাগ্রত থাকতে হবে। সদা জাগ্রত থাকার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার পেছনে যে দর্শন একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিণত হতে সক্ষম হবো।

বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, দালালদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যারা কয়েকটি বিশেষ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যতিরেকে। সত্তরের নির্বাচনে যে ২৮ ভাগ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেয়নি তাদের সংখ্যা বর্তমানে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর তারা হচ্ছে সেই জনগোষ্ঠী যারা স্টাবলিসমেন্টের সাথে ছিল। এই স্টাবলিসমেন্টের সাথে থাকার কারণে ২৪ বছর অর্থনৈতিক শক্তি জোগাড় করেছিল। আর এই অর্থনৈতিক শক্তি পরবর্তীতে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই সেই অবয়বে বাঙালিদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। অথচ মাত্র চার বছরের মাথায় ৭১ এর পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন যেমন বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের ঘটনা ঠিক তেমনিভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা বাঙালির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও লজ্জাজনক ঘটনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিহত পুলিশ সদস্য এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্মাননা স্মারক তার পুত্রের হাতে তুলে দেয়া হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৬ আগস্ট ২০২২

Back to top button