নারায়নগঞ্জ

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ, ২৩ আগস্ট – নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. অনিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক ২৭ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অধনস্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে মিলে এই কর্মকর্তা ২২ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত দিয়েছেন বঞ্চিত টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।

জানা গেছে, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখসহ পরিচয় প্রকাশ না করে ডাকযোগে গত ১৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মীরা। একই অভিযোগ জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হয়েছে।

ওই অভিযোগে স্বাস্থ্যকর্মীরা উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিরতিহীনভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে করোনার টিকা দিয়ে যাচ্ছেন। এ সময়ে ওয়ার্ডভিত্তিক ৫০টিরও বেশি টিকা দিবসে টিকা প্রদান করেছেন। এছাড়া রুটিন করে উপজেলা স্থায়ী কেন্দ্রে শুরু থেকে এই স্বাস্থ্যকর্মীরাই টিকা দিচ্ছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে ৪ দিন এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ দিনের হিসেবে টাকা পেয়েছেন। এরপর আর কোন টাকা পাননি স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অভিযোগেটিতে আরও বলা হয়েছে, টিকা সংক্রান্ত এমন আটটি বিলের টাকা এবং ২০২১ সালের থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১১ মাসের স্থায়ী কেন্দ্রের বিল এসেছে। কিন্তু এ বিল থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের একটি টাকাও দেয়া হয়নি। এই টাকাগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনিক বিশ্বাস, স্বাস্থ্য সহকারি এমটি ইপিআই নাজিম উদ্দিন এবং হেড ক্লার্ক জাহাঙ্গীর বাদশা ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইসমাইল মিলে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া গত ১১ মাস যাবত অফিস টাইমের পর টাকার বিনিময়ে করোনার ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তারা। শিশু টিকার কার্ড ও শিশুদের টিকা এনজিওদের কাছে বিক্রি করে দেন তারা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দুই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “১৯ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৩ জন পোর্টার ম্যান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করেছেন। দৈনিক ভিত্তিতে তাদের টাকা পাওয়ার কথা। ডিজি অফিসের লাইন ডিরেক্টরের তথ্যমতে সব টাকা উপজেলা পর্যায়ে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু একটি টাকাও কেউ পায়নি। এইরকম ২৭ জন কর্মী বঞ্চিত। আত্মসাতের টাকার পরিমাণ ২২ লাখেরও বেশি। জানুয়ারি মাসেরও ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার একটি বিল আসে। এই টাকাটাও পায়নি কেউ। অথচ নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য উপজেলায় টাকা দেওয়া হয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনিক বিশ্বাস বলেন, “কোন কোন বিল তোলা হয়েছে সেইটা এই মুহূর্তে বলতে পারবো না। আমি তো সবগুলো ফাইল দেখিও না। যেসব টাকা এসেছে সবগুলোই দেওয়া হয়েছে। টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য না।”

তিনি আরও বলেন, “আর আমি যা করি তা সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়ে করি। তিনি আমার সব কাজ সম্পর্কে অবগত রয়েছেন”।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান জানান, অভিযোগের তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগটি বেনামে করা হয়েছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তার প্রেক্ষিতে আমরা শক্তিশালী একটি তদন্ত কমিটি করেছি। সপ্তাহখানেক ধরে তারা তদন্ত করছেন।

সূত্র: বিডি প্রতিদিন
এম ইউ/২৩ আগস্ট ২০২২

Back to top button