জাতীয়

ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন অকার্যকর

জিয়াদুল ইসলাম

ঢাকা, ২৩ আগস্ট – বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা চালুর জন্য সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তঃব্যাংক রেট নির্ধারণ করে না দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর একে অপরের মধ্যে ডলারের লেনদেন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সংকটের কারণেও নিজেদের মধ্যে ডলারের লেনদেন করা থেকে বিরত রয়েছে ব্যাংকগুলো।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কাছে ডলার বিক্রিতে সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও মানছে না অনেক ব্যাংক। ফলে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ডলারের বাজারে চলমান অস্থিরতাও কাটছে না।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চলমান অস্থিরতা নিয়ে সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এ সময় ব্যাংকগুলোর ডলার কেনাবেচার স্প্রেড তথা মুনাফার সিলিং সর্বোচ্চ ১ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রবাসী আয় আহরণে প্রতি ডলারে ব্যাংকগুলোকে এখনো ১০২-১০৪ পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। রপ্তানি আয় নগদায়নেও ১০০ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে। আর আমদানিকারদের কাছ থেকে প্রতি ডলারে আদায় করা হচ্ছে ১০৫-১০৬ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। এর মানে ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা সব সময়ই চালু ছিল। কিন্তু সংকটের পর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত ডলার না থাকার কারণে আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। তবে এখন তাদের হাতে অতিরিক্ত ডলার আছে, তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সেটি নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। তবে ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ বর্তমানে কোনো ব্যাংকের কাছে ১৫ শতাংশের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা থাকলেই তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি অথবা আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

সূত্র জানায়, নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের যোগদানের আগে গত ৩ জুলাই সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায়ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নের করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই সভায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসরুর আরেফিন আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানান।

ওই সভায় এক্সিম ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, বর্তমানে বিসি সেলিং রেট ৯৩ টাকা হলেও আন্তঃব্যাংক কোন রেট না থাকার কারণে আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিসি সেলিং রেটের সঙ্গে সঙ্গে ১০/২০ পয়সা তারতম্যে আন্তঃব্যাংক হার নির্ধারণ করা হলে আন্তঃব্যাংক লেনদেন চালু করা যেতে পারে।

সভায় সাবেক গভর্নর ফজলে কবির জানান, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় হার নির্ধারণে ভাসমান মুদ্রাহার পদ্ধতি অনুসরণের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত একটি হার অনুসৃত হচ্ছে, যার ভিত্তিতে ডলারের বিসি সেলিং রেট নির্ধারিত হয়ে থাকে।

এদিকে ডলারে এক টাকার বেশি মুনাফা করা যাবে না বলে সম্প্রতি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ আগের সিদ্ধান্ত। চলমান সংকটের কারণে ডলার সংগ্রহের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে এ নির্দেশনাও ব্যাংকগুলোর পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দেশে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমদানি ব্যয়ের অস্বাভাবিক উল্লষ্ফন ও প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে ডলারের সংকট কেন্দ্র করেই এ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে ক্রমশ মান হারাচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রতি ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৫ টাকা। গতকালও এই দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৩ আগস্ট ২০২২

Back to top button