জাতীয়

ওষুধের দামে মাথায় হাত নিম্নবিত্তের

ঢাকা, ২২ আগস্ট – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আইয়ুব আনসারী। কিডনি ও ডায়াবেটিস জটিলতায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি ওষুধ সেবন করেন। প্রতি মাসে ওষুধ কিনতে তাঁর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগলেও এখন তা ৩০ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। বেতনের টাকায় চলে চার সদস্যের সংসার। ওষুধের ব্যয় মেটাতে এই মাসে তাঁর ধার নিতে হয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। ব্যয় বহন করতে না পেরে ইনসুলিন নেওয়া বাদ দিয়ে আগামী মাস থেকে সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও রাজধানীর একাধিক ফার্মেসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল এক মাসে ওষুধের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর খাবার স্যালাইনের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শনিবার থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ আগ থেকেই বেশি দামে বিক্রি করছে এসএমসির ওরস্যালাইন। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩০ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। যদিও ওই বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের এক মাস আগ থেকে ওষুধের দাম বাড়িয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই তালিকায় স্থান পায়নি এমন অনেক ওষুধের দামও বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। ফার্মেসির মালিকরা বলছেন, কোনো ধরনের হিসাব ছাড়া প্রতিনিয়ত দাম বাড়াচ্ছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিকৃত ওষুধের দামও সমন্বয় করতে হয়েছে।
রাজধানীর ৫০টির অধিক ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ওসারটিলের দাম ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এনজিনক ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে প্যারাসিটামালের। বাচ্চাদের ২০ টাকার নাপা সিরাপ একবারে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। নাপা ট্যাবলেট ৮ টাকা থেকে করা হয়েছে ১২ টাকা। প্যান্টোনিক্স ট্যাবলেট ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা করা হয়েছে। ফিক্সোকার্ড ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করা হয়েছে। অতি জরুরি ওষুধের দামই বেশি বেশি বেড়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ ব ম ফারুক বলেন, ওষুধের দাম বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিংয়ে ঔষধ প্রশাসনের একটি আলাদা টিম থাকে। মাঠ পর্যায়ে তাদের তদারকি না থাকায় বাজারে এমন সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। দাম সমন্বয়ের সঙ্গে বাজারেও বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি বা এসএমসি ‘ওরস্যালাইন’ প্রস্তুত করে। কোম্পানির মহাপরিচালক আব্দুল হক বলেন, উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামালের দাম বাড়ায় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে স্যালাইনের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় একাধিক কোম্পানি ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য আমাদের কাছে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু ওষুধের দাম সমন্বয় করেছি। তবে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা ফার্মেসি বেশি মূল্য রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজার তদারকির বিষয়ে আমাদের আলাদা টিম রয়েছে। তারা সব সময় কাজ করছে। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও সারাদেশে একসঙ্গে মনিটর করা সম্ভব নয়।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২২ আগস্ট ২০২২

Back to top button