উত্তর আমেরিকা

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন কি অনিবার্য?

ওয়াশিংটন, ২০ আগস্ট – আমেরিকা তো বটেই, গোটা পশ্চিমা বিশ্বে একটা প্রশ্ন ঘুরপাঁক খাচ্ছে বারবার। ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল যিনি উল্টে দিতে চেয়েছিলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট যিনি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যিনি সখ্য গড়তে চেয়েছিলেন, সেই রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আবারও নির্বাচনে লড়বেন? যদি লড়েন, তাহলে তাকে হারানো যাবে তো?

এর উত্তর দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। কিন্তু, ২০২৪ সালের প্রাক-নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে আসন্ন প্রাক-নির্বাচন এখন আরও কাছে। তাছাড়া, হোয়াইট হাউজে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আর মার্কিন ভোটারদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে অযৌক্তিক আচরণ সত্ত্বেও রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।

এ সপ্তাহে ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের প্রাথমিক নির্বাচনে লিজ চেনির ভরাডুবি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাক-নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত সবাই না পারলেও বেশিরভাগ প্রার্থীই জিতেছেন। পরাজিত অনেক প্রার্থীও তার সমর্থন চেয়েছিলেন। এটি ট্রাম্পের প্রভাব বাড়ার বড় লক্ষণ। এই প্রতিযোগিতা রক্ষণশীলতার ধরন নিয়ে নয়, হয়েছে কোন প্রতিযোগী সবচেয়ে বেশি এমএজিএ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন- ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান) তা নিয়ে।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা করেছিলেন, তার জন্য তাকে অভিশংসিত করার পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের যে ১০ রিপাবলিকান নেতা ভোট দিয়েছিলেন, তাদের আটজনই হয় অবসর নিচ্ছেন নাহয় প্রাক-নির্বাচনের ভোটাররাই অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে কিছু রাজ্যের নির্বাচনে প্রশাসনিক শীর্ষপদের জন্য দলটির মনোনীত ব্যক্তিরা হলেন এমন সব লোক, যারা ২০২০ সালে ভোটচুরি হয়েছিল, ট্রাম্পের এমন দাবিকে সমর্থন করেন।

প্রাথমিক জরিপ বলছে, ২০২৪ সালে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ৫০ শতাংশই দলীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ট্রাম্পকে বেছে নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস বলে, প্রাথমিক জরিপে মোটামুটি ৩০ শতাংশ সমর্থন থাকা ব্যক্তিরা খুব সহজেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে দিতে পারেন। সেখানে ৫০ শতাংশ সমর্থন থাকা ট্রাম্পের জন্য দুর্দান্ত শুরুই বটে।

কয়েক মাস আগেও মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত হয়ে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস বা অন্য কাউকে আমেরিকাকে মহান করার (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) দায়িত্ব তুলে দেবেন রিপাবলিকান ভোটাররা। কিন্তু এখন যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সহযাত্রী হওয়াকেই নিজের জন্য সেরা বলে মনে করতে পারেন খোদ ডিসান্টিসই।
এখন থেকে রিপাবলিকান পার্টির প্রথম প্রাক-নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। যদি না ট্রাম্প নিজেই প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকেন অথবা কোনো কিছু তার প্রার্থী হওয়া আটকে দেয়, তাহলে তিনিই হতে পারেন ২০২৪ নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। আর তেমনটি হলে দ্বিতীয় প্রশ্নটা সামনে আসে: তাকে থামানো যাবে তো?

ট্রাম্পের সামনে প্রথম বাধা যুক্তরাষ্ট্রের আইন। এ মাসে ফ্লোরিডার মার-এ লাগো রিসোর্টে এফবিআই’র অভিযানের পর তার বিরুদ্ধে চলমান আরেকটি তদন্ত প্রকাশ্যে আসে। এর বহু কিছু এখনো অজানা। অপ্রকাশিত পরোয়ানা বলছে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার সময় যে গোপন নথিপত্র নিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেগুলো খুঁজছে মার্কিন বিচার বিভাগ। তদন্ত শেষ হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, নথিগুলো নিরাপদ এবং তার দায়িত্ব শেষ হয়েছে। তবে নথিগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী আইনি প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে ডিসান্টিসের মতো বহু রিপাবলিকান ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো গারল্যান্ডকে অভিশংসন এবং এফবিআই’র বরাদ্দ বাতিলের দাবি তুলেছেন। অথচ এরাই বেসরকারি ইমেইল সার্ভার ব্যবহার করায় হিলারি ক্লিনটনকে জেলে ঢোকানোর দাবি তুলেছিলেন। রিপাবলিকানদের এই আচরণ দ্বিচারিতা হতে পারে। তবে ডেমোক্র্যাটদেরও মনে রাখা উচিত, ২০১৬ সালে মার্কিন বিচার বিভাগ হিলারির বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে- তিনি ট্যাক্স রিটার্নে মিথ্যা বলেছেন কি না, ৬ জানুয়ারি আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না এবং ২০২০ সালের নভেম্বরে জর্জিয়ার ফুল্টন কাউন্টির ভোটের ফলাফল বদলে দিতে চেয়েছিলেন কি না। এই তিনটি তদন্তের ভবিষ্যৎও সমানভাবে অনিশ্চিত।

বাকি সবার মতো ট্রাম্পও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত নির্দোষ। আর তার বিরোধীদের পুরোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকা উচিত। তারা আগের প্রতিটি ঘটনায় আশা করেছিল, কিছু একটা (মুয়েলারের তদন্ত, প্রথম অভিশংসনের বিচার, দ্বিতীয় অভিশংসনের বিচার) হয়তো ট্রাম্পকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেবে। অথচ তিনি আজও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

বস্তুত, এসব আইনি ঝামেলা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্প জেতার সম্ভাবনাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনীতির বাইরে তিনি কেবল একজন সাধারণ নাগরিক, যিনি কিছু বিচারের মুখে রয়েছেন। কিন্তু যতক্ষণ ট্রাম্প একজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, ততক্ষণ তিনি এমন একটি দলের প্রধান যারা গত নির্বাচনে ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোট পেয়েছিল। ফলে বিচারাধীন হওয়া, এমনকি দোষী সাব্যস্ত হওয়াও ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পালে জোর হাওয়া দিতে পারে।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ২০ আগস্ট ২০২২

Back to top button