জাতীয়

‘আইএমএফের ঋণ নিয়ে অপচর্চা হয়েছে’

ঢাকা, ২০ আগস্ট – প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক অপচর্চা হয়েছে। আইএমএফ যখন এসেছে, তখন দেখা হয়েছে—তাদের চারটি ক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ কী কী নিতে পারে। চারটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো নেওয়া সম্ভব। এর মধ্যে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট হচ্ছে একটি, বাকি ছিল ক্লাইমেট ফান্ডে। সেটি শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর জন্য আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও কিন্তু হয়নি।’

আজ শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘বেসামাল বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘আমি যদি দেখি, বাজারে কোথায় কোথায় আমার প্রোডাক্ট আছে সেটি কি অপরাধ? তাহলে বেইলআউট (চরম আর্থিক সংকট বা প্রায় দেউলিয়া অবস্থা) কেন? আমার দুঃখ লাগে, এ বছর বাংলাদেশের জন্য গর্বের। আমরা পদ্মা সেতু করেছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হচ্ছে, এ সময়ে বেইলআউট হবে—বলা মানেই হচ্ছে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস নেই।’

দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোতেও হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে আমাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই ধাক্কা হঠাৎ এসেছে কারণ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নেওয়ার সময় একটা যুদ্ধ চলে। আমরা বলি না কিন্তু সেখানে বেশি দামে নেয়। হয়তো অন্যভাবে কাজটা করতে চায়। সেই কারণে কিন্তু হঠাৎ করে ডলারের উপর একটা চাপ পড়েছিল। সেটি তো এখন ধীরে ধীরে সংশোধনের দিকে চলে আসছে। এই আশঙ্কা আগে থেকেই যে থাকা লাগবে তা কিন্তু দরকার নয়।’

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর পেছনে সরকারের যে দর্শন কাজ করেছে, তা হচ্ছে ডলারের ওপর চাপ হয়তো কন্টিনিউ করতে পারে। এজন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে। বাজেট ঘাটতি পূরণ হয় কোথা থেকে, হয় ট্যাক্স বাড়াতে হবে আর নইলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংক থেকে নিলে বেসরকারি খাতে কিন্তু প্রভাব পড়ে। সেরকম কিছু যাতে না হয়, সেজন্য আমরা আগে থেকেই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই।’

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে মাথা পিছু আয় ২ হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি, বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার ডলার। আমাদের মাথা পিছু আয় সেখান থেকে বেশি হলে ডিজেলের মূল্য কম থাকবে কেন। তারা যদি কিনে চলতে পারে, আমরা কেন পারবো না। সেটা যে একদম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে না, সেটার একটা হিসাব আমরা করেছি।’

বাজারে বিভিন্ন পণ্যে ঘাটতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাজারে একটা ঘাটতি সবসময় থাকে। এখানে ডিমের সিন্ডিকেট কোথা থেকে আসলো আমার জানা নেই। ৩ কোটি টন চাল উৎপাদন করা হয় বাংলাদেশে। অর্থনীতিতে আমরা একটি জিনিস বলি পারফেক্ট মার্কেট; সেটি পৃথিবীতে কোথাও নেই। আমাদের অনেক ভালো ভালো দিক আছে। আমরা কিন্তু প্রথমে ভয় দিয়ে শুরু করি। আমাদের বাজেট নিয়েও অনেকে ঠাট্টা করে। ২০০৫ সাল থেকে আমাদের বাজেট ১০ গুণ বেড়েছে। সেই অর্থে কিন্তু সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা ১০ গুণ বাড়েনি।’

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এডিটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/২০ আগস্ট ২০২২

Back to top button