জাতীয়

চা শ্রমিকদের ৩৫০ টাকা মজুরি নিয়ে লাইভে যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

হবিগঞ্জ, ২০ আগস্ট – সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, দেশের মানুষ বিশ্বাস করে চা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। তাদের বর্তমান দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি এখন আর সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কিছুই না। দেশের মানুষ জানে ১২০ টাকার দিনমজুরি দিয়ে এখন কিছুই হয় না। এটা কোনো ব্যক্তির প্রতিদিনের পারিশ্রমিক হতে পারে না। তাই সব মানুষের চাওয়া, চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হোক।

শুক্রবার (১৭ আগস্ট) হবিগঞ্জে চা শ্রমিকদের মাঝে স্ব-উদ্যোগে খাবার বিলি করার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তোষ রবিদাস অঞ্জনের ফেসবুকের পোস্ট তুলে ধরে ব্যারিস্টার সুমন জানান, মা এখনো প্রতিদিন সকালে দৌড়ান চা বাগানে। আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মজুরি পান মাত্র ১২০ টাকা। এই সামান্য মজুরিতে কিভাবে চলে একজন শ্রমিকের সংসার? আজকাল সন্তোষের মায়ের শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। তাইতো ছেলেকে তিনি বলেন-‘তোর চাকরি হইলে বাগানের কাজ ছেড়ে দেব।’

সুমন বলেন, যে শ্রমিকদের কোনো আয় নেই তারা দিন আনে দিন খায়। আর তারা যখন কোনো আন্দোলন করতে যায় তখন মালিকরা তাদের খাবার বন্ধ করে দেয়।

আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেহেতু আন্দোলন শুরুই করেছেন, আর মালিকরা যেহেতু আপনাদের না খাইয়ে রাখতে চায়, তাই আপনারা না খেয়ে মারা যাবেন, কিন্তু দৈনিক সাড়ে ৩০০ টাকা মজুরির দাবি মালিকরা না মানার আগে আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না।

তিনি এসময় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে চা শ্রমিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। তিনি কয়েকটি চা বাগানের নাম উল্লেখ করে বলেন, এর আগে ওখানে তাদের খাবার দিয়ে আসছি। আজ এখানে তালিকা অনুযায়ী ১০০ জনকে খাবার দিয়ে যাচ্ছি। নতুন তালিকা করে আবারও খাবারের ব্যবস্থা করবো।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি ঢাকায় বলে এসেছি আপনারা জেনেছেন, বাংলাদেশের চা শ্রমিক ভাই-বোনরা হরতাল ও আন্দোলন করছে। কারণ, তারা বছরের পর বছর ধরে মালিকদের নির্যাতন সহ্য করে আসছেন এবং ১২০ টাকা মজুরিতে বহুদিন ধরে কাজ করে আসছেন। তাদের দাবি, তারা সাড়ে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি চান। এ দাবিতে তারা ধর্মঘট করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মালিকপক্ষ তাদের দাবি মেনে নিচ্ছে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নীতির কথা উল্লেখ করে চা শ্রমিকদের ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই, যেহেতু আমার বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে। আপনাদের সাথে ছোটকাল থেকে বড় হয়েছি। আপনাদের আন্দোলন ও অভাব-অভিযোগের কথা আমি জানি। এখন যেহেতু সুযোগ পেয়েছি আমি চাই এই সুযোগে আপনাদের সঙ্গে থাকতে।

তিনি বলেন, আমি কখনো কোনো আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই না। কারো সঙ্গে আন্দোলন বা প্রতিবাদ করি না। আমি একাই প্রতিবাদ-আন্দোলন করি। তবে আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং যতদিন পর্যন্ত আপনাদের দাবি মালিকপক্ষ মেনে না দেবে ততদিন আপনাদের পাশে আছি।

তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের ওপর চরম নির্যাতন হচ্ছে। এখন সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। চালের দাম বেড়ে ১০০ টাকা হতে যাচ্ছে। সব জিনিসের দাম বেশি। এসময় একজন শ্রমিক দৈনিক ১২০ টাকা দিয়ে না চাল কিনতে পারে, না ডাল কিনতে পারে, না মাছ কিনতে পারে।

তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। অনেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকেন। শ্রমিকদের বঙ্গবন্ধু সহযোগিতা করে গেছেন। ভবিষ্যতেও তারা আওয়ামী লীগের সাথে থাকবে বলে আমার আশা।

সুমন বলেন, এ কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার এলাকায় চা শ্রমিকরা যতদিন আন্দোলন করে যাবে আমি ততদিন তাদের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে পাশে থাকবো। তাদের পাশে দাঁড়াবোই। চাল, ডাল, আটা আমার যতটুকুই আছে, তাই নিয়ে চা শ্রমিকদের পাশে থাকবো।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ২০ আগস্ট ২০২২

Back to top button