জাতীয়

ব্যক্তিগত গাড়িনির্ভরশীলতা বাড়ছে

ঢাকা, ২০ আগস্ট – পাবলিক যানবাহন ছেড়ে দিন দিন বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) নির্ভরতা। তবে গেল তিন মাসে কমেছে গাড়ির পরিমাণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আমদানীকৃত ব্যক্তিগত গাড়ির প্রায় ৮০ শতাংশই বাজার দখল করে আছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। এই বছরের জুন পর্যন্ত গেল ৫ বছরে এ ধরনের গাড়ি আমদানি হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৫০টি। এসবের অধিকাংশই জাপান থেকে আনা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনায় সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা পাওয়া। এ ছাড়া দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। আবার করোনা মহামারীর সময়ে গণপরিবহনের ভিড় এড়াতে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন।

মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের কাছে রিকন্ডিশন্ড গাড়িই বেশি পছন্দ। জাপানে এক থেকে পাঁচ বছর চলার পর বাংলাদেশে আসে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। নতুনের তুলনায় দামে কম হওয়ায় এসব গাড়ি বাজারের বড় অংশ দখল করে আছে।

সাধারণত জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বেশি আমদানি হয়। টয়োটার এলিয়ন, প্রিমিও, ফিল্ডার মডেলের গাড়ি বেশি আসে। এ ছাড়া হোন্ডাসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল) মডেলের গাড়িও আমদানি হয়।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে ২৩ হাজার ৭৫টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২ হাজার ২টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ হাজার ২৫৮টি, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে

১৪ হাজার ৪৩৮টি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৭৭টি। এ হিসাবে দেখা যায় ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি বাড়ছে।

বারভিডা সভাপতি মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও আমদানি বাড়িয়ে দেন। করোনাকালেও গাড়ির চাহিদা ভালো ছিল। কিন্তু গেল তিন মাস ধরে গাড়ি বিক্রি নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ¦ালানির দাম বেড়ে যাওয়া এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ক্রেতাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের ১০০ শতাংশ মার্জিন দিয়ে এলসি করতে হচ্ছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে।

এদিকে গাড়ি আমদানিতে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে পেছনে ফেলেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা। তুলনামূলক কম খরচে আমদানি ও গাড়ি রাখার সুবিধার কারণে এই বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড মিলিয়ে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ২০ হাজার ৮০৮টি গাড়ি। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে ১৩ হাজার ৯৭৫টি।

রাজধানীর হক’স বে অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী ও বারভিডার সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে যে পরিমাণ গাড়ি আমদানি হয়, তা মোটেই বেশি নয়। মধ্যবিত্ত বাড়ার কারণে গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনায় সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেওয়াটাও অন্যতম কারণ। তবে এখন আর সে পরিমাণ আমদানি হচ্ছে না। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গাড়ি কেনার চাহিদা কমেছে।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২০ আগস্ট ২০২২

Back to top button