লালমনিরহাট

ইউএনওকে পেটানোর হুমকি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

লালমনিরহাট, ১৬ নভেম্বর- হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের সরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া এবং রাজস্ব তহবিলের ১৯টি চেক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরও একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় পৃথক দুইটি ডায়রি নথিভুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।

আদিতমারী থানায় ডায়রিটি করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

জিডিতে বলা হয়েছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজের অংশ দাবি করেন। এতে বিধি মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বলা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে চলে আসেন।

সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ুনকে ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খোলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মনসুর উদ্দিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ সময় ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’ বলেও মন্তব্য করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

অন্যদিকে আদিতমারী থানায় আরও একটি ডায়রি করেন উপজেলা পরিষদের মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান।

ডায়রিতে বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর অফিস শেষে বাড়িতে চলে যান তিনি। গত ১৫ নভেম্বর অফিসে এসে ভেতরের পকেট গেট খোলা দেখতে পেয়ে অফিসের চার সহকর্মীকে নিয়ে গচ্ছিত কাগজপত্র যাচাই করেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভার নথি, উপস্থিত হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা এবং উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রোববার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরো ৫ জন সহকারীর উপস্থিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস চেক বইটি দেখতে চেয়ে হাতে নেন। এ অবস্থায় উপজেলা রাজস্ব তহবিলের হিসাব নং-৩৩০০৪৯৬৪ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আদিতমারী শাখার ১৯টি চেক যা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধের নিমিত্তে যৌথ স্বাক্ষরিত ছিল সেগুলো তিনি তাদের উপস্থিতিতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন।

এ বিষয়ে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম দুইটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার কথা স্বীকার করে বলেন, দুইটি জিডি তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন:  লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা: ৫ দিনের রিমান্ডে মসজিদের মুয়াজ্জিন

আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, আমাকে ফাঁসাতেই নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সে কারণেই জিডি করা হয়েছে। চেকগুলোতে তার (চেয়ারম্যান) কোনো স্বাক্ষর ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উপজেলার ১৭ কর্মকর্তার দেয়া অভিযোগের তদন্ত রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লালমনিরহাট স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. রফিকুল ইসলাম সকলের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই তদন্ত কার্যক্রম চলে।

এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। কমিটি আগামী মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলেও জানা গেছে।

সূত্র: জাগোনিউজ

আর/০৮:১৪/১৬ নভেম্বর

Back to top button