জাতীয়

ডিএমপি কমিশনার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যারা

ঢাকা, ১৭ আগস্ট – বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বাহিনীটির বর্তমান কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত বছরের ৩০ অক্টোবর শফিকুল ইসলামের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী ৩০ অক্টোবর। ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসেবে নেতৃত্বে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ডিএমপি কমিশনারের পদটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদগুলোর মধ্যে একটি। এরই মধ্যে কমিশনার হওয়ার দৌড়ে দুজনের এগিয়ে থাকার জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা এখনই মুখ খুলছেন না। তবে ডিএমপি মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি কমিশনারের পদটি অতিরিক্ত আইজিপি সমমর্যাদার। এটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদ। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিই এ পদে দায়িত্ব পাবেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি কমিশনারের পদটিতে কে আসবেন সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে অনুমোদন দেন। পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় এ পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে যে কেউ এ দায়িত্ব পেতে পারেন।

মো. আতিকুল ইসলাম
মো. আতিকুল ইসলাম বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ডেভেলপমেন্ট) হিসেবে কর্মরত। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তিনি ডিএমপি কমিশনার হওয়ার আলোচনা রয়েছেন।

আতিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়ায়। তিনি আইপিজিএমআর, (ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ) বর্তমানে বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি বিষয়ে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিসিএস-১২তম ব্যাচের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন আতিকুল ইসলাম। বেসিক ট্রেনিং শেষে শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় যোগদান করেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে ডিআইজি (হাইওয়ে) হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নৌ-পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ছয়বার আইজি ব্যাজ, দুবার বিপিএম সার্ভিস, দুবার পিপিএম (সেবা) (গ্যালান্ট্রি) অর্জন করেন।

আতিকুল ইসলাম ব্যক্তিজীবনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশপ্রধান মাহবুবুর রহমান
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ (অতিরিক্ত আইজিপি) প্রধান মাহবুবুর রহমান জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। এএসপি হিসেবে নরসিংদী জেলা পুলিশে, সার্কেল এএসপি হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে এবং এএসপি সদর সার্কেল হিসেবে নেত্রকোনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) হিসেবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি সিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মহালছড়ি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও বগুড়া এপিবিএনে। উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও) হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে এবং পুলিশ সুপার হিসেবে হাইওয়ে (পূর্ব), বরিশাল ও কুমিল্লা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০২-০৩ সালে কসোভো ও ২০০৫-০৬ সালে আইভরিকোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তিনি লাভ করেন প্রেসিডেন্সিয়াল পুলিশ মেডেল (পিপিএম-সেবা) পদক।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মক্ষেত্রে সততা, সাহসিকতা, দক্ষতা আর সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের কারণে এরই মধ্যে সুখ্যাতি পেয়েছেন তিনি। তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। পেশাগত কাজের বাইরে লেখালেখিও করেন। এছাড়া তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। কাজ করছেন দেশের কাবাডি নিয়েও।

কর্মক্ষেত্রের বাইরে অবসর সময়ে প্রতিনিয়ত বই পড়েন পুলিশের এ কর্মকর্তা। তাছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন, যাতে দেখিয়েছেন দূরদর্শিতা। বইটিতে তুলে আনেন মন্ত্রীর বাল্যকাল, পড়াশোনা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়াবলি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ বইটি। বইটি প্রকাশ করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।

এছাড়া ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে একটি বই সম্পাদনা করেন ডিআইজি হাবিব। যার নাম দেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’। এছাড়া সবশেষ চলতি বছরের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় হাবিবুর রহমানের গবেষণাগ্রন্থ ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’। বইটিতে তিনি বেদেপল্লির অজানা ভাষাকে একটি পূর্ণাঙ্গ বই হিসেবে লিখিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাট বাসুদেবপুর গ্রামে সান্দার বেদে গোত্রের প্রায় ২০০টি পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করে। যাদের শতভাগ মুসলমান। অথচ এ জনগোষ্ঠীর কেউ মারা গেলে মুসলমান হিসেবে জানাজা ও দাফন-কাফনও করতে পারতো না। পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে আশপাশের কোনো কবরস্থানে তাদের কবরও দিতে দেওয়া হতো না। এমন করুণ অবস্থা জানতে পেরে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি সহকর্মীদের সহযোগিতায় একটি জায়গা খুঁজে পান, যেটি কিনে দান করেন এ জনগোষ্ঠীর ২০০ পরিবারের কল্যাণে।

তাছাড়া ২০২০ সালের শুরুতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় বহু পুরোনো যৌনপল্লিতে প্রথমবারের মতো একজন যৌনকর্মীর পুরোপুরি ইসলামি প্রথা মেনে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়। পরে চেহলামেরও আয়োজন করা হয়। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হিসেবে করে দিয়েছেন পশু খামার। অনেককে পোশাক কারখানায় চাকরি, পার্লার ও খাবার দোকানের ব্যবসা গড়ে দিয়েছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

এসব উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন মানবিক পুলিশ হিসেবে সুনাম পাওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এখন নতুনভাবে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। যার সুফলও মিলছে। বিশেষ করে যৌনপল্লির শত শত শিশুকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে হাবিবুরের নিজ হাতে গড়া উত্তরণ ফাউন্ডেশন।

ডিআইজি হাবিবুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এ উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ এটি সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ‘জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭’র উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক পাশেই নবনির্মিত জাদুঘর ভবনের উদ্বোধন করেন।

এখন সময়ই বলবে কে হচ্ছেন ঢাকার (ডিএমপি) পরবর্তী পুলিশের অভিভাবক।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১৭ আগস্ট ২০২২

Back to top button