জাতীয়

উত্তরার ঘটনায় কার কী শাস্তি হতে পারে, জানালেন সচিব

ঢাকা, ১৬ আগস্ট – উত্তরায় গার্ডার চাপায় প্রাইভেট কারের পাঁচ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ি করে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, কাজ বাতিল করা, কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

তিনি বলেছেন, এতো বড় ক্ষতির জন্য শুধু জরিমানা করা যাবে না। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা যদি নেয়া হয় তার লাইসেন্স চলে যাবে। বাংলাদেশে তারা আর কোনো কাজ করতে পারবে না। তবে তার জন্য চূড়ান্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

উত্তরায় সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার প্রাইভেট কারের উপরে পড়ে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)-কে দায়ি করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন সড়ক সচিব আমিন উল্লাহ নুরী।

তিনি বলেন, ছুটির দিনে ঠিকাদারের কাজ করা কথা না। তারা কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ করছিলো। এভাবে উন্মুক্ত রেখে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হলে আগের দিন তারা একটি ওয়ার্ক প্ল্যান দেবে, তাদের কতজন লোক থাকবে, কতগুলো ক্রেন লাগানো হবে, কখন পুলিশকে জানাবে এসব থাকে। গতকাল ঠিকাদার এগুলো না করেই কাজটা করেছে। কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে জানতে চাইলে সড়ক সচিব আমিন উল্লাহ বলেন, আমাদের চুক্তিতে যেমন থাকে জরিমানা করা হয়, কাজ টার্মিনেট করা হয় এবং তারা যেন আর কোনো কাজ করতে না পারে এজন্য ব্ল্যাক লিস্ট করা হয়। আমরা চুড়ান্ত রিপোর্টটা আসুক। আমি আজকেই চিঠি ইস্যু করবো, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এতো বড় ক্ষতির জন্য শুধু জরিমানা করা যাবে না। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা যদি নেয়া হয় তার লাইসেন্স চলে যাবে। বাংলাদেশে তারা আর কোনো কাজ করতে পারবে না।

এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের গাফলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সচিব বলেন, আগে যারা নিরাপত্তায় ছিলো তাদের আমরা টার্মিনেট করেছি। আমি যতটুকু জেনেছি আগের ঘটনাগুলোতে যারা গাফিলতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সচিব বলেন, কেউই দায় এড়াতে পারে না। একদিনে একটি তদন্ত হয় না। গতকাল ঘটনার পরপরই কিন্তু আমি সবাইকে ফোন করেছি। কোনো অবস্থাতেই অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করার সুযোগ নেই। ঠিকাদার কেন করেছে সেটাই হলো প্রশ্ন। কে সে করলো? কমকর্তা যারা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, যে ক্রেনে তোলা হয়েছিলো সেটি এর জন্য সক্ষম কিনা এটা তদন্ত কমিটি পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে জানা যাবে। এটা কিন্তু সে উপরে তুলছিলো না, এটা স্থানান্তর করছিলো। একটা সে সরিয়েছেও। চালককে ধরলে সেটি জানা যাবে। আমরা পুলিশকে বলেছি চালককে ধরতে।

সচিব জানান, নিয়মিত একটি মামলা হয়েছে। আমরা লাশগুলো আজকে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

সড়ক সচিব বলেন, এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কনসালটেন্ট থাকে। একটা অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্ট। তারা একটি ম্যাথডলজি দেয় কীভাবে করতে হবে। এরপরে ফেল করলে এক কথা। তারপরেও কনসালটেন্টকে বলেছি তোমার খোঁজ নেয়ার কথা। সে বলেছে, বন্ধের দিন তো কাজ করার কথা না। তারা বলেও নি কাজ করার জন্য।

‘কালকে কাজ বন্ধ ছিলো। যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের যারা সুপারভাইজার সেখানে ছিলো আজকেই তাদের সবাইকে শোকজ করবো। কমিটি আমাকে আগামী ২ দিনের মধ্যে রিপোর্টটা দেবে। ’

তিনি বলেন, ঠিকাদার কেন করলো। চূড়ান্ত রিপোর্টটা আসুক। এখানে কার কার গাফিলতি ছিলো, কাউকে মাফ করার কোনো সুযোগ নেই। যে দায়ি হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘তার (ঠিকাদার) কাছে আমি এখন লিখিত সিকিউরিট কমপ্লায়েন্স চাইবো। সেটি কনসালটেন্ট অনুমোদন করবে তারপর কাজ চালু হবে। ’

নিরাপত্তার বিষয়ে দূতাবাসকে জানাতে চাই
বিআরটি প্রকল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার লঙ্ঘণ করা নিয়ে চীনের দূতাবাসকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার।

তিনি বলেন, আমাদের এই তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে যে, তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) সেফটির বিষয়টি অনেকবারই লঙ্ঘণ করেছে। এজন্য আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে জানাতে চাই। এটা তদন্তে আমরা বলেছি।

নীলিমা আখতার বলেন, আমি এক কথায় বলতে চাই, দায় এড়ানোর প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের মূল্যবান জীবন চলে গেছে, এক্ষেত্রে আমরা কোনরকম কম্প্রোমাইজ করতে চাই না।

তিনি বলেন, কে দায়ী সেটা কিন্তু স্টেপ বাই স্টেপ আমাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কতটুকু দায়ী। সবগুলোর সাথে একটা লিগ্যাল কানেকশন আছে। আমাদের নাগরিকের জীবন মূল্যবান। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা এভাবে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে?

নীলিমা আখতার বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা এই জিনিসগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দায়টা ফিক্সড করতে চাচ্ছি যে কে কতটুকু দায়ী।

তিনি বলেন, আমাদের কাজটি প্রায় ৮০ ভাগ হয়ে গেছে। এখন আমরা শাস্তি দিতে পারি, তাদেরকে বাতিল করে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে আমরা যদি পুনরায় কন্ট্রাক্টর সিলেকশনে যাই তাহলে আমাদের জনগণকে আরো ভোগান্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।

কোন কোন ধাপে মনিটরিং
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, রোড সেফটি (সড়ক নিরাপত্তা) যেকোনো কনস্ট্রাকশন কাজের অন্যতম সেফগার্ড ইস্যু। এগুলো ছাড়া কোনো চুক্তি হয় না। চুক্তির মধ্যে ঠিকাদার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ইস্যুগুলো নিশ্চিত করবে, তখনই সে কেবল তার কাজে যেতে পারবে। সেগুলো কনফার্ম করছে কিনা, সেটি যাচাই করার জন্য কনসালটেন্ট আছে, প্রজেক্ট পার্সনেল আছে। তারা যাচাই করে দেখবে সেফটি মেজারমেন্টগুলো ঠিক আছে কিনা, যদি সেগুলো ঠিকমত কাজ করে তাহলে সে কাজ করার অনুমতি পাবে। অন্যথায় পাবে না।

তিনি বলেণ, এছাড়াও প্রকল্পের মধ্যে আলাদা প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টশন ইউনিট আছে। দাতা সংস্থা এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) কনসালটেন্টও আছে নামিদামি। দাতা সংস্থা এডিবি সেগুলো মনিটরিং করে।

সূত্র: বাংলানিউজ
এম ইউ/১৬ আগস্ট ২০২২

Back to top button