শিক্ষা

খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি

আবিদ হাসান

ঢাকা, ১৬ আগস্ট – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে করোনার পর খাবারের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৫ থেকে ২৫ টাকা। এর সঙ্গে সঙ্গে মানও কমতে শুরু করেছে। সব সময়ই দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মান কমতে থাকে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী খাবারের পুষ্টিগুণও নিশ্চিত করতে পারছে না হল ক্যান্টিনগুলো।

শিক্ষার্থীরা বলেন, হলের ক্যান্টিনে খাবারে ঠিকমতো তেল-লবণ দেওয়া হয় না। রান্না করা হয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। তালিকায় নেই কোনও ভিন্নতা। প্রায় প্রতিদিন একই মেনু। খাবারের পুষ্টিমান নিশ্চিত না হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যার ফলে পড়াশোনায়ও ব্যাঘাত ঘটছে।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার পর হল ক্যান্টিনগুলোতে নতুন করে খাবারের দাম না বাড়লেও মান কমেছে। তবে হলের দোকানগুলোতে বিভিন্ন খাবারের দাম বেড়েছে। স্লাইস কেকের দাম ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। ২০০ মিলি প্যাকেটজাত দুধ ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা, ডিম ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে স্যার এ এফ রহমান হলের দোকানি মো. ফারুক বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। বাজেট উপস্থাপনের পরপরই বেকারি, কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিমের দাম আগে কখনও এতো টাকা ছিল না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়, যার ফলে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।’

শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক আড্ডাস্থল ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসি। আর এখানে আড্ডার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ চা। দাম বেড়েছে চায়েরও। দুধ, আদা-লেবু চা ৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা; লিকার চা ৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮ টাকা; মরিচ চা, হরলিক্স চা ১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা; মাল্টা চা ৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা।

চায়ের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, চিনি, চা-পাতাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে চায়ের দামও বাড়াতে হয়েছে।

সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘হলের খাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও মান নিম্নমুখী। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে দফায় দফায় খাবারের দাম বাড়িয়েছে হল ক্যানটিনের মালিক ও দোকানিরা। হল প্রশাসন এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়।’

স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের হলের খাবারের মান ও দামের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। অতিরিক্ত দাম নিলেও আমরা কোনও পুষ্টিকর খাবার পাই না। একপিস মুরগির মাংসের সঙ্গে একপিস আলু খেতে হয়। রুই মাছের নাম করে সিলভার কাপ মাছ খাওয়ানো হয়। গরুর বট অপরিষ্কারভাবে রান্না করা হয়।’

শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী মারিয়াম আক্তার রুমি বলেন, হলের খাবারের মান ক্রমশই নিম্নগামী। রান্না অপরিচ্ছন্ন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হল ক্যান্টিন মালিক বলেন, আমরা নিজেরাও জানি এই খাবার খাওয়া সত্যিই কষ্টকর। মান আরও ভালো করা উচিৎ। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন জনকে মাসোয়ারা দিতে হয়। অনেকে খেয়ে টাকা দেন না। আবার তাদের ভালো খাবার দিতে হয়। এসব কারণে ইচ্ছে থাকলেও মান ভালো করতে পারি না। কাদের মাসোয়ারা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।

হলের খাবারের মান নিয়ে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘সব হল প্রভোস্টকে নির্দেশ দেওয়া আছে মনিটরিং করতে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ সেটি মনিটরিং করি। ক্যান্টিন মালিকরা এখানে ব্যবসা করতে আসে। তার বেশি লাভ করছে কিনা সেটি আমাদের দেখতে হবে। আর এ রকম অভিযোগ শুরু থেকেই আছে।’

শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি নিশ্চিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই জায়গায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা সেটি নিশ্চিত করতে পারছি না।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ১৬ আগস্ট ২০২২

Back to top button