বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জোরালো হচ্ছে
ঢাকা, ১৫ আগস্ট – ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ইতিহাসের এক বেদনাবিধুর কলঙ্কজনক দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালি জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে সেদিন হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার কিছুটা হলেও ঘটনার নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আজও অধরা। তাই বিভিন্ন সময়ে নানা মহল থেকে এই হত্যাকা-ের পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছিল তাদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। দিন দিন ওই দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ হত্যাকা-ের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের কথা বলেও আসছেন। কিন্তু সেটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, একটি কমিশন গঠনের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছি। সেটি নিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানাতে রাজি হননি তিনি। কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, কোভিডসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কমিশনের রূপরেখার ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা করা দরকার, সেটি হয়ে ওঠেনি। কিছু দিনের মধ্যে এই আলোচনা করতে পারবো এবং এই বছর শেষ হওয়া নাগাদ কমিশন চালু করতে পারবো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একদল সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ
বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। ওই মামলায় ১৯৯৮ সালে ১৫ জনকে মৃত্যৃদ- দেন আদালত। তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যৃদ- সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। ওই ১২ আসামির একজন পলাতক থাকাবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান। দুই দফায় ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু পাঁচজন এখনো অধরা।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত ছিল বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতারাও ‘পঁচাত্তরের কুশীলবদের’ মুখোশ উন্মোচনে কমিশন গঠনের দাবি সামনে এনেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বছরও বলেছিলেন- মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে, যাতে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে’ তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা যায়।
এদিকে গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা ‘কলকাঠি নেড়েছে’ তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে একটি ‘কমিশন’ গঠন করা উচিত বলে মনে করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে তারা এই মত প্রকাশ করেন।
ভবিষ্যতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে, সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রটির নেপথ্যে কারা ছিল, তা উদ্ঘাটনে বিষদ গবেষণা ও তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শোকের মাসের ওপর এক সাক্ষাৎকার প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘গোটা ষড়যন্ত্রেও স্বরূপ উদ্ঘাটনে একটি সত্য অনুসন্ধানী কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রটি কয়েকটি ধাপে দীর্ঘদিন ধরে করা হয় এবং ‘যদি আমরা প্রতিটি ধাপের দিকে আলোকপাত করি, তবে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রটি সম্পর্কে জানতে পারব যে, কীভাবে একটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা সম্পর্কযুক্ত। এই ষড়যন্ত্রের কয়েকজন নেপথ্য নায়ক বিদেশের মাটিতে বসে পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকতে পারে এবং অন্যরা পর্দার আড়াল থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য ঘাতক পাঠিয়ে থাকতে পারে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমেরিকার সিআইএও জড়িত থাকতে পারে। ইতিহাসের স্বার্থেই তাদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত।’
এই কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রফেসর সিদ্দিক যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উদাহরণ দেন।
সূত্র: আমাদেরসময়
আইএ/ ১৫ আগস্ট ২০২২