অভিমত/মতামত

বেদনার ভারে আজও নত হয় শির

সায়েম সাবু

এত শোক আর নামেনি ধরায়। এমন ব্যথার মালা কেউ পরেনি গলায়। নতুনের কেতন উড়িয়ে যে শোনালো বাঙালির জয়গান, সেই বাঙালির হাতেই তাকে দিতে হলো প্রাণ। শোকের যে রক্তধারা বইছে বাঙালির হৃদয়ে, সে শোকগাঁথা লেখা যায় না কোনো বেদনার অভিধানে।

হে, মানুষ। শোনো, পিতা হারানোর গল্প। বেদনার অশ্রুধারায় প্রবাহিত করো শক্তির ধারা। যতদিন রবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, ততদিনই রবে পিতা হারানোর বেদনা। শোকের পাষাণে দাঁড়িয়ে গাও পিতারই জয়গান।

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। রক্তের যে স্রোতধারা নেমেছিল পিতার বুলেটবিদ্ধ বুক থেকে, তা আজও প্রবাহমান। পিতার জন্য যে হৃদয় ভালোবাসার সাজানো বাগান, সে হৃদয়ে পিতা হারানোর রক্তক্ষরণ থামে কীসে?

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন তারই সুযোগ্য তনয়া শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পাঁচ দশকের বাংলাদেশ মুজিবকন্যার নেতৃত্বে এগিয়েছে বহুদূর। এগিয়েছে বিশ্ব সভ্যতাও। কিন্তু বাঙালির পুব আকাশের যে সোনালি সূর্য উদিত হওয়ার ঊষালগ্নেই অস্ত গেলো, সেই অমানিশার ঘোর জাতির ললাট থেকে কাটেনি আজও। পিতাকে হারিয়ে জাতি আজও হাতড়ে বেড়ায় সংকটের প্রতিক্ষণে।

বাঙালির ইতিহাসে বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে হাজার বছর ধরে। সেই বিদ্রোহী আগুনের সন্নিবেশ ঘটিয়েই টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন মুক্তির মহানায়ক। যার জন্মের শুভক্ষণে ধরণীতে সূর্য ছড়িয়েছিল মুক্তির আভা। খোকা নামের সেই ছোট্ট ছেলেটির জন্ম যেন ছিল শোষিতের জয়গান আর শোষকের প্রস্থানের।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে নামের বন্দনা কোনো সীমারেখায় টানা যায় না। তিনি জন্মেছিলেন বাঙালির মুক্তির বারতা নিয়ে। তবে শুধু জাতিসত্তার প্রশ্নেই নয়, তিনি এসেছিলেন বিশ্বমানবের মুক্তির কেতন উড়িয়ে।

বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালি, বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই বঞ্চিত মানুষের মুক্তির ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু বাঙালির, বঙ্গবন্ধু বিশ্বমানুষের। অথচ মানবতার সেই মুক্তির দূতকে জীবন উৎসর্গ করতে হলো ঘাতকরূপী মানুষেরই হাতে।

রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট। মানবসভ্যতার ইতিহাসে রক্তাক্ত এক অভিশপ্ত দিন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন একটি দেশকে যখন আলোর নিশানা দেখিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু, ঠিক তখনই ‘আগস্ট’ নামের অন্ধকার নেমে আসে জাতির জীবনে। আগস্টের এ দিনে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল শেখ মুজিবকে। কেবল তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে সে রাতে ঘাতকের বুলেটে অস্তমিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু নামের স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্য।

জাতির পিতার সোনার বাংলায় আজও রোজ সূর্য ওঠে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে। নতুনের কেতন উড়িয়ে মানুষেরা স্বপ্নজয়ের প্রত্যয়ে আজও এগিয়েও চলে। তবুও সে স্বপ্নে অপূর্ণতা রয়ে যায়। সে অপূর্ণতা যেন শুধুই স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে হারানোর। পিতাকে হারানোর।

আইএ/ ১৫ আগস্ট ২০২২

Back to top button