সিলেট

সিলেটে এবার দুই পরিবারের ৮ সদস্য অজ্ঞান

সিলেট, ১৪ আগস্ট – সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার বড়শালা থেকে এবার দুই পরিবারের ৮ সদস্যকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (১৩ আগস্ট) সকালে স্থানীয়রা অজ্ঞান অবস্থায় তাদেরকে ঘর থেকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। সন্ধ্যায় তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি চুরির উদ্দেশ্যেই খাবারের সঙ্গে কোনো কিছু খাইয়ে এমনটি করতে পারে। পুলিশ কিছু আলামত জব্দ করেছে। তবে তদন্তের আগে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বরশালা এলাকার সুহানুর রহমান সাগর, নিগার সুলতানা, মাজেদা বেগম, সুভাষ চন্দ্র দে, শ্রীভাষ চন্দ্র দে, সুজন দে, শিবানী চন্দ্র দে ও গৌরি রানি দে।

জানা গেছে, সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের মুখে অবস্থিত ‘সিলেট ক্লাব’র পেছনের বাসায় শুক্রবার রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের বা চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে একটি বাসার একটি ইউনিটে চুরির ঘটনা ঘটে। অপর ইউনিটে চুরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় চোরেরা। ওষুধ খাওয়ানোর ফলে দুই পরিবারের ৮ সদস্য অসুস্থ হয়ে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় তারা বাসায় ফিরেছেন।

অসুস্থদের মধ্যে একজন সুলতানা বেগম (২৮)। তিনি সিলেটে একটি বেরসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করেন। তিনিও ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সুলতানা বেগম শনিবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় জানান, ‘সিলেট ক্লাব’র পেছনের টিনশেডের একতলা বাসায় তারা দুটি পরিবার ভাড়া থাকেন। শুক্রবার রাতে দুই পরিবারের সদস্যরা রাতের খাবার খেয়ে নিজ নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে সুলতানার ভাই সাহেদ আহমদ রাতে অন্যত্র খেয়ে আসায় বাসায় রাতের খাবার খাননি। সাহেদ প্রায় পুরো রাতই জেগে ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে পাশের কক্ষ থেকে মা-বোনের চিৎকারে তিনি দৌঁড়ে গিয়ে দেখেন ওই কক্ষের জানালার এক অংশ খোলা।

এ সময় সাহেদের মা মাজেদা বেগম সাহেদকে বলেন, জানালার কপাট খোলার শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেলেও তিনি চোখে ঝাপসা দেখছিলেন এবং কয়েক বার বমি করেন। তাই চিৎকার করে ছেলেকে ডাকেন।

সাহেদ এ সময় মা-বোনসহ তার পরিবারের ৩ জনকে অসুস্থ দেখতে পান। এসময় পাশের ইউনিটের লোকজনকে ডাকতে গিয়ে তাদেরও একই অবস্থা দেখে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ভোরে অসুস্থ সবাইকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সুলতানা বেগম আরও জানান, তাদের দুই পরিবারের মোট ৮ জন অসুস্থ হয়েছেন।

এ বিষয়ে সাহেদ আহমদ জানান, তাদের রান্নাঘরের জানালার নেটের কিছু অংশ কাটা। জানালার পাশেই চুলায় ভাত-তরকারি রান্না করা হয়। শনিবার সকালে সাহেদ দেখেন ওইখানে সাদা রঙের গুঁড়া ছড়ানো। ভাতের সঙ্গে কেউ ঘুমের বা চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়েছে বলে সাহেদের মন্তব্য।

তিনি জানান, তাদের বাসার কিছু চুরি না হলেও পাশের ইউনিটের খাবার কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে চোরেরা।

এর আগে গত গত ২৬ জুলাই ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুরস্থ মঙ্গলচন্ডি স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই কর্তব্যরত চিকিৎসক ওসমানীনগর উপজেলার বড়দিরারাই এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রাবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে (১৮) মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত ছিলেন- রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা ইসলাম (৪৫), তাদের ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৪) ও মেয়ে সামিরা ইসলাম (১৯)। এরা সবাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

৬ আগস্ট মধ্যরাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রফিকুলের মেয়ে সামিরা ইসলামও। তবে রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা ইসলাম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৪) দীর্ঘদিন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওই বাড়িতে ফিরে গেছেন।

ওই মৃত্যু ও অসুস্থতার রহস্যও এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। বহুল আলোচিত ওই ঘটনার রেশ কাটতেই ১৩ আগস্ট সিলেটে ঘটলো দুই পরিবারের ৮ সদস্য সংজ্ঞাহীন হওয়ার আরেক ঘটনা।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১৪ আগস্ট ২০২২

Back to top button