প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নারী চিকিৎসককে গলাকেটে হত্যা
ঢাকা, ১২ আগস্ট – রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক নামের নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসমি মো. রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারী চিকিৎসককে হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব হত্যাকান্ডে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব- ২ এবং র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একইসাথে উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডের সময় আসামির পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজাউল জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা বিয়ে করেন। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতেন। ভিকটিমের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন রেজাউলের একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এই বিষয়টি ভিকটিম জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। এই নিয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন সময় বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে রেজাউল তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জান্নতুলকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী তিনি ভিকটিমকে হত্যার জন্য তার ব্যাগে ধারালো চাকু নেন।
বৃহস্পতিবার জান্নতুলকে তার জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে রেজাউল পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ নামক একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। সেখানে জান্নাতুলের সঙ্গে বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। পরে ভিকটিমের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর তিনি গোসল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হন, যাতে হত্যার কোনো আলামত তার শরীরে দেখা না যায়। এ সময় তিনি ভিকটিমের মোবাইল ফোনও সঙ্গে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় দরজার বাইরে থেকে সে রুমের তালা বন্ধ করে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরেও জানা যায়, হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যান রেজাউল। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এরপর আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গ্রেপ্তার রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইতোমধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকেও কর্মরত ছিলেন। গত জুন মাসে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/১২ আগস্ট ২০২২