জাতীয়

লাগামহীন বিদেশ ভ্রমণ প্রস্তাব

হামিদ-উজ-জামান

ঢাকা, ০৯ আগস্ট – সরকার যখন কৃচ্ছ্রসাধনে ব্যস্ত, তখনও বিদেশ ভ্রমণ প্রস্তাবে লাগাম টানা যাচ্ছে না। একের পর এক এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আসছে পরিকল্পনা কমিশনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন প্রস্তাব পাচ্ছে অনুমোদন। এবার মাশরুম চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চাচ্ছেন ৩০ কর্মকর্তা। ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব এসেছে। অনুমোদন পেলেই প্রকল্পের আওতায় শুরু হবে সফরের আয়োজন। এজন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রত্যেকের পেছনে খরচ হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা করে। শুধু তাই নয়, দেশের ভেতরেও প্রায় ১১ ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৯ কোটি ৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫৭ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমানো হয়েছে। ফলে এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পের যে কোনো অপচয় বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি কমিশনের সদস্যদের। একেবারেই প্রয়োজন না হলে যেন বিদেশ সফরের সুপারিশ না করে। ফলে আগের তুলনায় এমন অযাচিত এবং অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু একেবারেই বন্ধ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প করার যৌক্তিকতা সম্পর্কে আমি জানতে চেয়েছি। তারা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি নানা প্রশ্ন করে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাশরুম চাষ শিখতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তবে এর প্রয়োজন আছে কি না, সেটি ভালো করে দেখা হবে।’

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে-৯৫টি ছাদ প্রদর্শনী এবং ৮০০টি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। এছাড়া ৬০০ বর্গমিটার ডরমিটরি ভবন সম্প্রসারণ, ৪৫০ বর্গমিটার ল্যাবরেটরি কাম অফিস ভবন সম্প্রসারণ, ৯৫০ বর্গমিটার ওয়ার্কশপ কাম ল্যাবরেটরি ভবন, একটি ইনকিউবেশন রুম এবং ৩৫টি ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি ৫০০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় ৩ ব্যাচে পর্যায়ক্রমে ৩০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্যই ব্যয় হবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ২৭ ব্যাচ উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের জন্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া ৮০০ ব্যাচ দলভুক্ত চাষির প্রশিক্ষণের ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। ১০০ ব্যাচ ছাদবাগানি বা সাধারণ চাষির প্রশিক্ষণ বাবদ ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ৮০০ ব্যাচ রিফ্রেসার প্রশিক্ষণ (দলভুক্ত চাষিদের) বাবদ ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২৯ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) বা উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তার (এসএএইচও) প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ৭ ব্যাচ প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। ৯ ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ লাখ টাকা। ৬ ব্যাচ জিও (সরকারি অফিসার) ও এনজিও কর্মকর্তার (বেসরকারি কর্মকর্তা) প্রশিক্ষণে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এসবের বাইরে আরও আছে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ বদলি ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, এ প্রকল্পটি একনেকে যাবে কি না, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলো মনে করছে, তাদের বিদেশ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। তাই তারা প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা এ বিষয়ে অনেক কঠোর। ফলে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরের প্রস্তাব প্রায় বাদ যাচ্ছে।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/০৯ আগস্ট ২০২২

Back to top button